প্রতিষ্ঠিত ও সম্মানজনক ব্যবসার মধ্যে ফার্মেসি ব্যবসা অন্যতম। এখানে কম পুঁজি বিনিয়োগ করে সহজেই লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু ইচ্ছা করলেই যে কেউ ফার্মেসী ব্যবসা শুরু করতে পারবে না। একটা দোকানে কিছু ওষুধ নিয়ে বসে পড়া বেশ সহজ, কিন্তু প্রক্রিয়াটা অবৈধ।
এ জন্য আপনাকে অবশ্যই ব্যবসার অন্যান্য আনুসাঙ্গিক প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সাথে আরো অতিরিক্ত করতে হবে ফার্মেসীস্টের ট্রেনিং এবং ড্রাগ লাইসেন্স। ওষুধ তিনিই বিক্রি করতে পারবে যার ফার্মেসীস্ট ট্রেনিং আছে এবং যিনি ড্রাগ লাইসেন্স পেয়েছেন। ড্রাগ লাইসেন্স ছাড়া ওষুধের ব্যবসা সম্পূর্ণ অবৈধ এবং আইনগত ভাবে এটি একটি দন্ডনীয় অপরাধ।
আর ওষুধ ব্যবসার জন্যে অতি প্রয়োজনীয় এই ড্রাগ লাইসেন্সটি ইস্যু করে বাংলাদেশ সরকারের ‘ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর’। ড্রাগ লাইসেন্সটি অর্জন করতে হলে ‘বাংলাদেশ ফার্মেসী কাউন্সিল’ থেকে আপনাকে তিন মাসের একটি ফার্মেসীষ্ট ট্রেনিং কোর্স (সি ক্যাটাগরীর ফার্মেসীস্ট হিসেবে রেজিঃ পাওয়ার জন্য) সম্পন্ন করতে হবে।
ফার্মেসী কোর্স করতে চাইলে আপনাকে বাংলাদেশ কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে, যখন ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় তখন ভর্তি হতে হবে। ৩,০০০ – ৩,৫০০ টাকা খরচ হবে কোর্স করার জন্য। ক্লাশ হয় প্রতি শুক্রবার। আর পরীক্ষায় ১০০% পাশ করার জন্য আমার সাথে যোগাযোগ করে ফ্রি হ্যান্ড নোট নিতে পারবেন।
ড্রাগ লাইসেন্সের জন্যে আবেদন করতে যা প্রয়োজনঃ ১) ট্রেড লাইসেন্স ২) টি.আই.এন সনদপত্রের ফটোকপি ৩) পাসপোর্ট সাইজের ছবি ৪) ব্যাংক একাউন্ট এবং ব্যাংক সচ্ছলতার সনদপত্র ৫) দোকান ভাড়ার রসিদ/চুক্তিপত্র (নিজস্ব দোকানের ক্ষেত্রে দলিলের সত্যায়িত ফটোকপি)
৬) ফার্মেসীস্ট ট্রেনিয়ের সনদপত্রের ফটোকপি ৭) নাগরিকত্বের সনদপত্র/ভোটার আই.ডি কার্ডের ফটোকপি ৮) ফার্মেসীস্টের অঙ্গীকারপত্র [ফরম নম্বর-৭] (যথাযথ ভাবে পূরণকৃত) যোগাযোগের ঠিকানা: http://www.dgda.gov.bd
আপনি ড্রাগ লাইসেন্স পেয়ে ফার্মেসী দিয়ে বসার পর শুধু প্রেসক্রিপশন দেখে ঔষধ বিক্রি করতে পারবেন। আর কিছু না। আপনি যদি খুচরা বিক্রয়ের জন্য ফার্মেসী খুলতে চান তাইলে সবচেয়ে লাভজনক হল যেকোন মেডিক্যালের আশেপাশে দোকান নিয়ে বসা। কারন আপনি প্রেসক্রিপশন যত বেশি পাবেন বিক্রি তত বেশি হবে।
এক্ষেত্রে আপনি কাউকে চিকিৎসা দিতে পারবেন না। আপনার কাজ শুধু ওষুধ বিক্রি। শুধুমাত্র মেডিসিনের জন্য আপনার বেশি টাকা লাগবেনা। প্রাথমিক অবস্থায় ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা দিয়ে প্রয়োজনীয় ওষুধ কেনার পর দেখবেন কোম্পানির লোকেরা বাকিতে ওষুধ দেওয়ার জন্য লাইন ধরে বসে আছে, তাদের ওষুধ বিক্রি করে তাদের টাকা দিবেন।
শুধু তাদের ক্লোজিং এর ডেট মনে রেখে তাদের সাথে ভালো লেনদেন করলে আপনার সমস্যা হবে না। তবে ঔষধের ফার্মেসীতে কাস্টোমার তার চাহিদামত ঔষধ না পেলে আপনার ব্যবসা লাটে উঠতে পারে। ধরেন কেউ চাইল নাপা। আপনি বললেন নাপা নেই। তবে এইস আছে স্কয়ারের। এইস নিয়ে যেতে পারেন।
এইসব করে কাস্টোমার ধরে রাখা যাবে না। এখানে দেখতে হবে কোন ডাক্তার কোন ওষুধ লিখে থাকে (কোম্পানির MPO/MR দের মাধ্যমে যানা যাবে) সেই সকল ওষুধ কম হলেও রাখতে হবে। পুজি কম থাকলে দরকার হলে সপ্তাহে সপ্তাহে ওষুধ কিনবেন ।
কিন্তু গ্রাম এলাকায় বা যে খানে কোনো ভালো মেডিকেল নাই সেখানে এভাবে আপনি টিকতে পারবেন না। কারন প্রেসক্রিপশন পাবেন না বা কম পাবেন। এখানে আপনাকে টিকে থাকতে হলে অন্য কৌশল করতে হবে। যেহেতু এখানে কোয়ালিফাইড ডাক্তার (MBBS) নাই বা কম তাই এসব
এলাকায় আপনাকে উপরের সকল কিছুর পরেও আপনাকে ডাক্তার হতে হবে, গ্রাম্য ডাক্তার/ পল্লী চিকিৎসক। ছয় মাসের LMAF/LMAFP এসব কোর্স না করে এক বছরের প্যারামেডিকস (কারিগরী বোর্ডের বা কোনো বৈধ অর্গানাইজেশনের) না হয় দুই বছরের কমিউনিটি প্যারামেডিকস (নার্সিং কাউন্সিলের) কোর্স করবেন।
এর ফলে একজন রুরাল মেডিকেল প্রাক্টিশনার্স হিসেবে আপনি এলাকার মানুষদের প্যারামেডিকস সেবা দিতে পারবেন ও কমন কিছু রোগের চিকিৎসা দিতে পারবেন। সাথে জটিল রোগীদের অভিজ্ঞ ডাক্তারদের কাছে রেফার করতে পারবেন। এর ফলে স্থানীয় নরমাল রোগের চিকিৎসা দিতে ও নিজের দোকানের ঔষধ বিক্রি করতে পারবেন।
পল্লী চিকিৎসকদের/প্যারামেডিকসদের জন্য দক্ষতা বাড়ানোর জন্য, শিশু হসপিটাল MCH (মাদার এন্ড চাইল্ড হেলথ) কোর্স, সাভারের CRP ফিজিওথেরাপির বেসিক ট্রেনিং, জেলা সিভিল সার্জন অফিস/হাসপাতাল থেকে রিফ্রেসার কোর্স ইত্যাদি করতে পারবেন এর মেয়াদ ১৫ দিন থেকে ১ মাস।
এ ছাড়া, ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে টেলিমেডিসিন ক্লিনিক করার অনুমতি ও সহায়তা পেতে পারেন প্যারামেডিকসরা (খরচ ১ থেকে দের লক্ষ টাকা), SMC এর ট্রেনিং পেয়ে ব্লু স্টার ক্লিনিক করতে পারবেন (কোনো খরচ নাই) ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা দিয়ে বারতি আয় করতে পারেন।