প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী থেকে আসামি বনে যাওয়া রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি রয়েছেন বরগুনা জেলা কারাগারে। গত ১৯ জুলাই শুক্রবার রিফাত হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার পর থেকে বরগুনা জেলা কারাগারে রয়েছেন মিন্নি।
কারাগারে যাওয়ার পর থেকে নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে পার হতে হয়েছে মিন্নিকে। তবে বর্তমানে কারাগারে অন্য কয়েদীদের সাথে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করছেন মিন্নি। এমনটা জানিয়েছে বরগুনা জেলা কারাগারের একটি সূত্র।
সূত্র জানায়, মিন্নি এখন সম্পূর্ণ স্বাভাবিক আছেন, তবে মাঝে মাঝে বেশ উদাসীনতায় বসে থাকেন। জেলখানার স্বাভাবিক কাজ কর্ম শেষে তিনি বই ও পড়েন। মিন্নির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মিন্নিকে কিছু বই দেয়া হয়েছে। মিন্নি সেই বইগুলোই পড়ে। তবে অধিকাংশ সময় তিনি চুপচাপই থাকেন। খুব একটা কথা বলতে দেখা যায় না তাকে। বইকে সঙ্গী করেই কেটে যায় তার বেশিরভাগ সময়।
সূত্র আরও জানিয়েছে, মিন্নি কারাগারের যে কক্ষে থাকে সেই কক্ষ থেকে মাঝে মাঝেই ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ শোনা যায়। তবে প্রকাশ্যে কখনো মিন্নিকে কাঁদতে দেখা যায়নি। শুরুতে খাবার নিয়ে সমস্যা জানালেও এখন জেলখানার খাবারে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন মিন্নি। আগের চেয়ে স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়েছে মিন্নির বলেও দাবি করেছে এই সূত্র।
এদিকে জেলা পুলিশের সূত্র জানায়, উচ্চ আদালত থেকে এই মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাওয়ার পর অভিযোগপত্র (চার্জশিট) তৈরির ক্ষেত্রে বুঝে–শুনে এগোচ্ছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। মিন্নিকে কোন ধরনের আসামি করা হবে, সে ব্যাপারে আইনি মতামত নেয়ারও প্রক্রিয়া চলছে।
রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় নিহতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকাকে কেন জামিন দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তদন্ত কর্মকর্তাকে মামলার নথিপত্রসহ আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
জামিন প্রশ্নে রুল শুনানির জন্য ২৮ আগস্ট দিন ধার্য রেখেছেন আদালত। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত মঙ্গলবার দুপুরে এই আদেশ দেন।
আয়শা সিদ্দিকা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়ার আগে বরগুনার পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ হোসেন গত ১৮ জুলাই সংবাদ সম্মেলন করে আয়শার সংশ্লিষ্টতার কথা জানান। সে বিষয়েও এসপির লিখিত বক্তব্য চেয়েছেন আদালত।
জেলা পুলিশের সূত্রটি জানায়, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বরগুনা থানার পরিদর্শক হুমায়ন কবির ২৮ আগস্ট উচ্চ আদালতে মামলার নথি উপস্থাপনের জন্য বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। তার সঙ্গে আছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহজাহানও।
এর আগে পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির অভিযোগপত্র তৈরির ব্যাপারে উচ্চপর্যায়ের মতামত নিতে বেশ কিছুদিন ঢাকায় ছিলেন। তারা বরগুনায় ফিরে যখন অভিযোগপত্র প্রস্তুতের উদ্যোগ শুরু করেন, তখনই উচ্চ আদালত রুল দেন।
আয়শার হয়ে আইনি সহায়তা দেয়া জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই বিভিন্ন চাপে আয়শা ও তার পরিবার প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে ছিল। স্থানীয় আদালতে আয়শার পক্ষে কোনো আইনজীবীও ছিলেন না। এই অবস্থায় ঢাকা ও বরিশাল থেকে আইনজীবী পাঠিয়ে আয়শাকে আইনি সহায়তা দেয়া হয়েছে।
অভিযোগপত্রে আয়শাকে আসামি করার ব্যাপারে জেড আই খান বলেন, রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী ও মামলার প্রধান সাক্ষী আয়শা সিদ্দিকাকে আসামি করা হলে মামলার মান নষ্ট হয়ে যাবে।
আয়শার পক্ষে লড়াই করা এই আইনজীবী মনে করেন, মামলায় আয়শাকে আসামি করার জন্য পুলিশ তড়িঘড়ি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়ার ব্যাপারে প্রস্তুতি নিলেও সম্প্রতি উচ্চ আদালত বিষয়টি নিয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের কাছে ব্যাখ্যা তলব করায় পুলিশ বিষয়টি নিয়ে এখন অনেকটা সংযত।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুন সকালে প্রকাশ্যে বরগুনা সরকারি কলেজ গেটের সামনে রিফাতকে কুপিয়ে আহত করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় বরিশাল নেয়ার পর তিনি মারা যান। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জন ও ৫/৬ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা করেন। রিফাত হত্যা মামলায় প্রথমে মিন্নিকে প্রধান সাক্ষী করা হলেও পরে মিন্নিকেও এই মামলার আসামি করা হয়।