রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ফের মিয়ানমারের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে থাকবে চীন। বৃহস্পতিবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আয়োজিত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের কাছে এই সংকটের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এমনটাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
ড. মোমেন বলেন, বৈঠকের দিন-তারিখ ঠিক হয়নি। চীনের নতুন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা মিয়ানমারের সঙ্গে কথা বলবে এবং তারপর সিদ্ধান্ত নেবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চীন বলেছে, রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে বাংলাদেশের পাশে আছে। মিয়ানমার এবং বাংলাদেশ উভয় দেশকেই তারা বন্ধু মনে করে। এ সমস্যা দূর করতে একযোগে কাজ করতে চায় তারা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা ব্রিফিংয়ে অংশ নেন।
বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার তাদের দায়িত্ব পালন করেনি উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার গত ২২ আগস্ট এক প্রেস রিলিজ দেয়। সেখানে আমাদের ওপর দায় চাপিয়ে বলেছে, বাংলাদেশ প্রত্যাবাসন শুরু করতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা আয়োজন সম্পূর্ণ করতে পারেনি। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বললাম, বাংলাদেশের যা যা করার সবই করেছে। এটা মিয়ানমারের দায়িত্ব তাদের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরতে রাজি করানো। এটা বাংলাদেশের দায়িত্ব না। মিয়ানমার তাদের দায়িত্ব পালন করেনি বলে রোহিঙ্গারা যায়নি।
মন্ত্রী বলেন, আমাদের দায়িত্ব লজিস্টিক জোগাড় করা। তার সবই আমরা করেছি। তারা আমাদের ৩ হাজার ৪৫০ জনের একটা লিস্ট দিয়েছিল। আমরা সঙ্গে সঙ্গে সেটা জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরকে দিয়েছি তাদের মতামত জানার জন্য। সেখানে মিয়ানমার ও চীনের প্রতিনিধিরা পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। তারাও দেখেছিল। আমাদের যত ব্যবস্থ খুবই স্বচ্ছ। আমরা বলেছি, আপানারা সবকিছু দেখতে পারেন। যেকোনো বিদেশি-স্বদেশি এটা দেখতে পারেন। আমাদের কোনো কিছু লুকানোর নেই।
প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে আসতে থাকে রোহিঙ্গারা; এই সংখ্যা কিছু দিনের মধ্যে সাত লাখ ছাড়িয়ে যায়। আগে থেকে বাংলাদেশে অবস্থান করছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা।
তাদের কক্সবাজারের কয়েকটি কেন্দ্রে আশ্রয় দিয়ে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তায় জরুরি মানবিক সহায়তা দিয়ে আসছে বাংলাদেশ সরকার।
রাখাইনের গ্রামে গ্রামে হত্যা-ধর্ষণ আর ব্যাপক জ্বালাও পোড়াওয়ের মধ্যে প্রাণ হাতে করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা এই রোহিঙ্গারা ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে অন্তত চারটি শর্তের কথা বলছেন।
তাদের দাবি, প্রত্যাবাসনের জন্য আগে তাদের নাগরিকত্ব দিতে হবে। জমি-জমা ও ভিটেমাটির দখল ফেরত দিতে হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। রাখাইনে তাদের সঙ্গে যা হয়েছে, সেজন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।