বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে হাইকোর্টের দেয়া জামিনের বিরুদ্ধে আপিল করবে রাষ্ট্রপক্ষ। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারোয়ার হোসাইন বাপ্পী রায়ের পর বলেন, আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের রায়ের পর সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
সারোয়ার হোসাইন বাপ্পী বলেন, মিন্নিকে কেন জামিন দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন আদালত। সে রুল যথাযথ ঘোষণা করে জামিন দিয়েছেন আদালত। যেহেতু সে মহিলা এবং তার বাবার জিম্মায় থাকবে, তাই তাকে জামিন দেয়া হয়েছে। তবে এ জামিনের সে অপব্যবহার করতে পারবে না এবং মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে পারবে না। কিন্তু জামিনের শর্ত অপব্যবহার করলে বিচারিক আদালত তার জামিন বাতিল করতে পারবেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, মিন্নির বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ ছিল। সে যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন, সেখানে নিজেকে ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। নয়ন বন্ডের সঙ্গে মিন্নির ঘটনার আগে ও পরে ১৩ বার ফোনালাপও হয়েছে। যাই হোক, আদালত তবু তাকে জামিন দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ দুই শর্তে মিন্নিকে জামিন দেন।
মিন্নির জামিন প্রশ্নে হাইকোর্টের দেয়া রুলের ওপর শুনানি বুধবার শেষ হয়। শুনানি শেষে এ বিষয়ে রায়ের জন্য আজকের দিন ধার্য রেখেছিলেন হাইকোর্ট। সে অনুযায়ী আজ রায় দিলেন আদালত।
আদালতে মিন্নির জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেডআই খান পান্না, তাকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী মশিউর রহমান, মাক্কিয়া ফাতেমা, জামিউল হক ফয়সাল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারোয়ার হোসেন বাপ্পী।
রায় শেষে মিন্নির আইনজীবী জেডআই খান পান্না আদালত চত্বরে গণমাধ্যমকে এ বিষয়ে ব্রিফ করেন। তিনি জানান, এ মামলার অভিযোগপত্র দেয়ার আগেই মিন্নিকে নিয়ে পুলিশ সুপারের সংবাদ সম্মেলনের ব্যাপারেও আদালত নির্দেশনা দিয়েছেন। তাতে আদালত বলেছেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরা আইনসম্মত নয়। গ্রেপ্তার করা ব্যক্তি সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্রিফিং নিয়ে নীতিমালা তৈরির জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে রিফাত শরীফকে। তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি হামলাকারীদের সঙ্গে লড়াই করেও তাদের দমাতে পারেননি। গুরুতর আহত রিফাতকে ওইদিন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ ও পাঁচ-ছয় জনকে অজ্ঞাত আসামি করে বরগুনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পরে ১৬ জুলাই সকাল পৌনে ১০টার দিকে মিন্নিকে তার বাবার বাড়ি বরগুনা পৌর শহরের নয়াকাটা-মাইঠা এলাকা থেকে পুলিশ লাইনে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসা হয়। এরপর দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ শেষে একই দিন রাত ৯টায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
পরদিন (১৭ জুলাই) মিন্নিকে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হলে বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরপর কয়েক দফা আবেদন জানালেও নিম্ন আদালতে জামিন মেলেনি মিন্নির। পরে একই মামলায় জামিন চেয়ে মিন্নি হাইকোর্টে আবেদন করেন।