রাতটা পোহালেই আধা সামরিক বাহিনীর উপস্থিতিতে প্রকাশিত হতে চলেছে ভারতের আসামের চূড়ান্ত জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি)। এর মাধ্যমে অনুপ্রবেশকারী বিদেশি নাগরিক কারা সরকারিভাবে তা ঘোষণা করা হবে। এর আগে, খসড়া তালিকায় বাদ গিয়েছিল ৪২ লাখ মানুষের নাম, যাদের অধিকাংশ বাংলাভাষী হিন্দু ও মুসলমান। তাই এনআরসিকে কেন্দ্র করে বিপুল জনগোষ্ঠীর মধ্যে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। রাজ্যজুড়ে তৈরি হয়েছে থমথমে পরিস্থিতি। যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে রাজধানী গুয়াহাটির সর্বত্র জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা। মোতায়েন করা হয়েছে হাজার হাজার আধাসামরিক বাহিনী ও পুলিশ।
জানা যায়, গত চার বছর ধরে যাচাই-বাছাইয়ের পর আসাম সরকার শনিবার ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেন্স (এনআরসি) এর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করতে যাচ্ছে।
তালিকা থেকে বাদ পড়ে রাজ্যের লাখো বাসিন্দা বিশেষ করে মুলসমানদের নাগরিকত্ব হারিয়ে রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো জানায়, স্থানীয় সময় শনিবার সকাল ১০টায় অনলাইনে নাগরিকপঞ্জি প্রকাশ করা হবে। এজন্য রাজ্য জুড়ে ‘সেবা কেন্দ্র’ স্থাপন করা হয়েছে। যাদের ইন্টারনেট নেই তারা ওইসব কেন্দ্রে গিয়ে তালিকা দেখতে পারবেন।
তালিকা থেকে ৪১ লাখের বেশি আবেদনকারীর নাম বাদ পড়তে পারে বলে ধারণা প্রকাশ করছে বিশেষজ্ঞরা।
তবে যাদের নাম বাদ পড়বে তারা এখনই বিদেশি গণ্য হবেন না বলে জানিয়েছে রাজ্য সরকার। বরং তারা আপিল করার জন্য ৬০ থেকে ১২০ দিন সময় পাবেন।
গৃহমন্ত্রণালয় জানায়, আপিল আবেদনের শুনানির জন্য রাজ্যে অন্তত এক হাজার ট্রাইবুনাল গঠন করা হবে। এরই মধ্যে একশ ট্রাইবুনাল গঠন করা হয়েছে, সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ নাগাদ ওই সংখ্যা দুইশোর বেশি হবে।
ট্রাইবুনালে হেরে গেলে যে কেউ হাই কোর্ট এবং সেখান থেকে সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারবেন।
সমস্ত আইনী প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত কাউকে বন্দিশিবিরে নেওয়া হবে না বলেও জানিয়েছে আসাম সরকার।
প্রতিবেশী বাংলাদেশে থেকে বহু মানুষ অবৈধভাবে আসামে বসবাস করছে এই দাবি তুলে কয়েক দশক আগে আসামে ‘বাঙ্গালি খেদাও’ আন্দোলন শুরু হয়।
অবৈধ বাংলাদেশিদের চিহ্নিত করে তাদের ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যেই চার বছর আগে আসাম সরকার নাগরিকপঞ্জি তৈরির কাজ শুরু করে।
নাগরিকপঞ্জিতে ঠাঁই পেতে হলে বাসিন্দাদের প্রমাণ করতে হবে তারা ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগে রাজ্যে আবাস গেড়েছেন।
গত চার বছর ধরে সেখানকার বাসিন্দাদের নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণের নানা কাগজ-পত্র হাতে এক দরজা থেকে অন্য দরজায় ছুটতে হয়েছে।
২০১৮ সালের জানুয়ারিতে প্রথম খসড়া নাগরিকপঞ্জি প্রকাশ করা হয়। সেখানে মাত্র এক কোটি ৮০ লাখ মানুষের ঠাঁই হয়। অথচ আবেদন করেছিল তিন কোটি ২৯ লাখ মানুষ।
যা নিয়ে তীব্র সমালোচনা ও বিক্ষোভ শুরু হলে ওই বছর জুলাই মাসে সংশোধিত খসড়া নাগরিকপঞ্জি প্রকাশ পায়। নতুন তালিকায় দুই কোটি ৮৯ লাখ মানুষের নাম ঠাঁই পেলেও বাদ পড়েন উত্তর-পূর্ব আসামের প্রায় ৪২ লাখ বাসিন্দা।