আসামে নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হয়েছে আজ সকালে। নতুন এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন ৩ কোটি ১১ লাখ মানুষ। বাদ পড়েছেন মোট ১৯ লাখ।
শনিবার স্থানীয় সময় সকাল বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ আসামে নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হয়। এর আগে খসড়া তালিকায় দেখা গিয়েছে ৪১ লক্ষ মানুষ নাগরিকত্ব প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছেন। হাজার হাজার মানুষ রয়েছেন ডিটেনশন ক্যাম্পে। ফলে এই পদক্ষেপকে ঘিরে ব্যাপক সতর্কতা জারি হয়েছে রাজ্যটিতে। সেখানে ২০ হাজার অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় আধাসেনা পাঠানো হয়েছে। রাজ্য জুড়ে টহল দিচ্ছে আসাম রাইফেলস এবং রাজ্য পুলিসের দাঙ্গা প্রতিরোধ বাহিনী। একাধিক স্পর্শকাতর জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো।
এনআরসি তালিকা প্রকাশের প্রতিক্রিয়া কী হবে, তা নিয়ে চরম আশঙ্কায় রয়েছে বিজেপি ও আসাম সরকারও। কেননা বাতিল পড়াদের ৪১ লাখের ওই তালিকায় দেখা গিয়েছে সিংহভাগই হিন্দু বাঙালি এবং ওই বিপুল পরিমাণ বাঙালি হিন্দুদের মধ্যে বিরাট সংখ্যক আসামেরই প্রকৃত বাসিন্দা বলেই মনে করছে সরকারও। সবথেকে বড় সঙ্কট হল প্রচুর উদাহরণ দেখা যাচ্ছে, একই পরিবারের কেউ তালিকায় আছে, আবার কেউ নেই। যেমন-স্বামী বৈধ নাগরিক, অথচ স্ত্রী প্রমাণের অভাবে ডিটেনশন ক্যাম্পে।
আসামের মুখ্যমন্ত্রী সেই সমস্যা নিয়ে অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করে বলেছেন, দরকার হলে আইন সংশোধন করে পুনরায় প্রকৃত নাগরিকরা যাতে বাদ না পড়েন সেটা নিশ্চিত করা হবে।
মুখ্যমন্ত্রী শুক্রবার সোনেওয়াল তালিকা প্রকাশের আগে বলেছেন, এখনই আতঙ্কের কোনও কারণ নেই। চূড়ান্ত তালিকায় নাম না থাকলেও ট্রাইব্যুনালে আবেদনের সুযোগ থাকছে। তাই অশান্তি বা আতঙ্ক ছড়াবেন না।
আজ এনআরসি তালিকা প্রকাশের প্রক্রিয়ার পর সেই বেআইনি নাগরিকদের নিয়ে সরকার কী করবে, এই প্রশ্ন সর্বত্র আলোচিত। ১২০ দিন সময় দেওয়া হবে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে আবেদনের জন্য। মোট ১ হাজার এরকম ট্রাইব্যুনাল খোলা হবে বলে সরকার জানিয়েছে। যদিও এখন আছে মাত্র ১০০টি ট্রাইব্যুনাল। সেপ্টেম্বরে আরও ২০০ খোলা হবে। আসামের বিজেপি দলটি শেষ মুহূর্তে তালিকা প্রকাশ পিছিয়ে দেওয়ার মরিয়া চেষ্টা করেছিল। কারণ কংগ্রেস, অসম গণ পরিষদ, এআইইউডিএফ তো বটেই, শাসক দল হয়েও বিজেপি শেষ পর্যন্ত স্বীকার করেছে যে, প্রচুর হিন্দু বাঙালি প্রকৃত নাগরিকও ঢুকে পড়েছেন বেআইনি তালিকায়। আর সেটা যদি হয় তাহলে ব্যাপক ছড়িয়ে পড়বে কেবল আসাম নয়, গোটা ভারত জুড়েই। শেষ পর্যন্ত মোদি সরকার এই বিশৃঙ্খলা সামাল দিতে পারবে কিনা তা নিয়েও আলোচনা চলছে।