এক সময়ে ভিক্ষা করে পেট চালাতেন। কিন্তু সেই মানুষটাকে দেখলে আজ আর আপনি সে কথা বিশ্বাসই করতে চাইবেন না। কারণ তিনি আজ প্রায় ৫০ কোটি টাকার মালিক। তার পোশাক আশাকেও ছড়িয়ে আছে টাকার জেল্লা।
তার নাম রেনুকা আরাধ্য। ভারতের বেঙ্গালুরু শহরের আনেকাল তালুকের ছোট্ট গ্রাম গোপাসান্দ্রাতেই তার জন্ম। বাবা পুরোহিত ছিলেন। কিন্তু রোজ কাজ পেতেন না। পাঁচজনের সংসারে খাবার জোটাতে তাই বাবার সঙ্গে ভিক্ষা করতেন রেনুকা-ও। অথজ আজ পরিবহন ব্যবসা থেকে বছরে আয় ৩৮ কোটি টাকা!হায়দরাবাদ, চেন্নাইয়ের ট্যাক্সি পরিষেবার কথা বললে সবার প্রথমে তার সংস্থার কথাই সবাই বলে উঠবেন।
ভিক্ষুক থেকে সফল ব্যবসায়ী হয়ে ওঠার পথটা মোটেও সহজ ছিল না। তিন ভাইবোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট রেনুকা। বড় ভাই আর বোনকে পড়াশোনার জন্য বেঙ্গালুরু পাঠিয়েছিলেন বাবা। কিন্তু রেনুকা থাকতেন বাবা-মার সঙ্গেই। গোপাসান্দ্রারই একটি স্কুলে পড়তেন তিনি। তবে বাবার কাজে হাত লাগানোর জন্য বেশির ভাগ দিনই স্কুলে যেতে পারতেন না। দরিদ্রদের বিনা পয়সায় চাল, রাগি, জোয়ার বিলি করা হত যেখানে, খবর পেলেই বাবার সঙ্গে গিয়ে লাইনে দাঁড়াতেন তিনিও। ভিক্ষা বা চেয়ে চিন্তে আনা সেসব দ্রব্য বাজারে বিক্রি করে বাড়ির লোকদের জন্য খাবার কিনে আনতেন রেনুকা।
১২ বছর বয়সে তাকে তার বাবা একটি বাড়িতে গৃহকর্মী হিসাবে কাজ করার জন্য পাঠিয়ে দেন। সেখানে গবাদি পশুর দেখাশোনা থেকে শুরু করে বাড়ির যাবতীয় কাজ করতে হত রেনুকাকে। তবে পড়াশোনার প্রতি তার ঝোঁক ছিল। কাজের ফাঁকে টুকটাক পড়াশোনা চালিয়ে যেতেন তিনি। নিজের আয়ের টাকায় চিকপেটের একটি স্কুলে ভর্তি হন। কিন্তু এর তিন বছর পরই বাবার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে গ্রামে ফিরে আসেন।
তারপর আর পড়াশোনার সুযোগ পাননি। মা অর বড় বোনের সমস্ত দায়িত্ব তার কাঁধে এসে পড়ে। কেননা তখন তার বিবাহিত ভাইটি যে মা-বোনের দায়িত্ব নিয়ে অস্বীকার করেছিলেন।
সংসার চালাতে মাত্র ১৫ বছর বয়সে এক কারখানায় কাজ শুরু করেন রেনুকা। তারপর একটা প্লাস্টিক কারখানায় যোগ দেন। কিন্তু সেই উপার্জনও যথেষ্ট ছিল না পরিবারের জন্য। তাই একই সঙ্গে রাতে দারোয়ানের কাজও করেছেন। এরপর একটা ছাপাখানায় ঝাড়ুদারের কাজ পান রেনুকা। ছাপাখানার মালিক তার সততায় খুশি হয়ে তাকে কম্পিউটারের বেসিক কাজ শিখিয়ে ছাপাখানায় কাজ দিয়ে দেন। টানা এক বছর তিনি সেখানেই ছিলেন। তারপর তিনি একটি সংস্থার সেলসম্যান হন।
রেনুকা যখন ২০ বছরের তরুণ তখন তার পুষ্পা নামে এক তরুণীর সঙ্গে পরিচয়। ভালোবেসে তাকেই বিয়ে করেন। এরপর কখনও কাপড়ের দোকান, কখনও মালির কাজ করে সংসার চালিয়েছেন। গাছ বেয়ে উঠে নারকেল পেরেও সংসার চালিয়েছেন। সেই সময় তার মাসে আয় ছিল মাত্র ৬০০ টাকা।
তখন সতীশ রেড্ডি নামে এক গাড়ি চালকের সঙ্গে পরিচয়ই হয় তার। আর এই ঘটনা তার ভাগ্য বদলে দেয়। সতীশের কাছ থেকে গাড়ি চালানো শেখেন আরাধ্য। চার বছর লাশবাহী গাড়ির চালক হিসাবে কাজ করেন তিনি। তারপর ঠিক করেন, ঋণ নিয়ে নিজের ট্রাভেল এজেন্সি খোলার।
২০০৬ সালে দেড় লক্ষ টাকা ঋণের বিনিময়ে জীবনের প্রথম গাড়িটা কিনে ফেললেন আরাধ্য। প্রথমে নিজেই গাড়ি চালাতেন। ব্যবসায় লাভ থেকে ক্রমে আরও ছয়টা গাড়ি কেনেন। ১২ ঘণ্টা করে দুই শিফটের জন্য ১২ জন চালকও রাখেন। ক্রমে তার ব্যবসা এতটাই বড় হয়ে যায় যে, এখন তিনি ৮শ গাড়ির মালিক। দিনরাত হায়দরাবাদ এবং চেন্নাইয়ের যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছে তার সংস্থার গাড়ি। এখন বছরে আয় ৩৮ কোটি টাকা। তবে এতেই সন্তুষ্ট নন রেনুকা। এখন তার টার্গেট বছরে ১০০ কোটি আয় করা।
রেনুকার ট্যাক্সি কোম্পানির নাম ‘প্রবাসী ক্যাব’। ভিখারি থেকে কোটিপতি হওয়ার পরও নিজের আদর্শ থেকে এক পা পিছু হটেননি রেনুকা। তার আদর্শ হলো: ‘বড় স্বপ্ন দেখুন, ঝুঁকি নিন। আর সৎপথে থাকুক।’সততাই রেনুকার জীবনের মূলমন্ত্র, যার ওপর ভর করে এত দূর উঠে এসেছেন রেনুকা। সূত্র :বাংলাদেশ জার্নাল