যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ আফগানিস্তান ক্রিকেট দলের বিপক্ষে ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি ওয়ানডে ও টি-২০ ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ দল। তবে নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে কখনও আফগানদের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ খেলেনি টাইগাররা। ২০১৮ সালে টেস্ট মর্যাদা পাওয়া আফগানিস্তানের বিপক্ষে আগামীকাল প্রথমবারের মত টেস্ট ম্যাচ খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে অভিষেক টেস্ট খেলতে নামছে নতুন এক বাংলাদেশ। নতুন প্রধান কোচ দক্ষিণ আফ্রিকা রাসেল ডমিঙ্গোর অধীনে নতুনভাবে পথচলা শুরু হচ্ছে টাইগারদের। শুধুমাত্র প্রধান কোচই নয়, পেস ও স্পিন বোলিং কোচেও পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ। তাই নতুন রুপে টেস্ট দিয়ে নতুনভাবে পথচলা শুরু হচ্ছে বাংলাদেশের। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে সকাল ১০টায় শুরু হবে বাংলাদেশ-আফগানিস্তানের এই সফরের একমাত্র টেস্টটি।
ইংল্যান্ডের মাটিতে দ্বাদশ ওয়ানডে বিশ্বকাপে অষ্টম স্থানে থেকে মিশন শেষ করে বাংলাদেশ। দলের ব্যর্থতার কারণে প্রধান স্টিভ রোডসের সাথে চুক্তি বাতিল করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিশ্বকাপ মিশন শেষ হবার ২১ দিন পরই শ্রীলংকা সফর করে বাংলাদেশ। অন্তবর্তীকালীন প্রধান কোচ সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ সুজনের অধীনে লংকা সফরে তিন ম্যাচ ওয়ানে সিরিজে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা পায় টাইগার দল।
বিশ্বকাপের পর থেকেই নতুন কোচের সন্ধানে নামে বিসিবি। হাই-প্রোফাইল অনেক কোচই দায়িত্ব নিতে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু সব দিক বিবেচনা করে গত ১৭ আগস্ট দুই বছরের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার ডমিঙ্গোকে কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয় বিসিবি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজকে সামনে রেখে ২১ আগস্ট থেকে দলের দায়িত্বভার বুঝে নেন ডমিঙ্গো। তার সাথে প্রথমবারের মত বোলিং কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেন প্রোটিয়াদের সাবেক পেসার ল্যাঙ্গাভেল্ট। ব্যাটিং কোচের দায়িত্বে বহাল ছিলেন আরেক দক্ষিণ আফ্রিকান নিল ম্যাকেঞ্জি। আর ভারতের সুনীল যোশির পরিবর্তে নিউজিল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক ও বাঁ-হাতি স্পিনার ড্যানিয়েল ভেট্টোরিকে বাংলাদেশের স্পিন কোচ হিসেবে নিয়োগ করা হয়। তাই নতুন কোচদের আগমনে এখন বাংলাদেশ দলের সাথে ‘নতুন’ শব্দটি যোগ হওয়াটা বাঞ্চনীয়।
শুধু কোচ নয়, ইনজুরি থেকে মুক্ত হয়ে নতুনভাবে নিয়মিত দলনেতাকেও পাচ্ছে বাংলাদেশ দল। ২০১৮ সালের নভেম্বরে দেশের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে আঙ্গুলের চোটে পড়েন সাকিব আল হাসান। ফলে নিউজিল্যান্ড সফরে বাংলাদেশের সর্বশেষ সিরিজে দলের দায়িত্ব পালন করতে পারেননি তিনি। ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার সফরের পর মুশফিকুর রহিমের কাছ থেকে টেস্ট দলের অধিনায়কত্ব পান সাকিব। কিন্তু ইনজুরির কারণে দেশের মাটিতে শ্রীলংকা ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজে অধিনায়কত্ব হিসেবে মাঠে নামতে পারেননি সাকিব। অবশেষে এক সিরিজ পর বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে অধিনায়কত্ব করতে নামবেন তিনি।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত ৮টি ওয়ানডে ও ৪টি টি-২০ ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। তবে টেস্ট আঙ্গিনায় লড়াই করা হয়নি টাইগারদের। ওয়ানডে ও টি-২০তে হাড্ডাহড্ডি লড়াই করেছে দু’দল। ওয়ানডেতে ৫টিতে বাংলাদেশ, ৩টিতে আফগানিস্তান জয় পায়। টি-২০তে ১টিতে বাংলাদেশ, ৩টিতে আফগানরা জয় পায়। তাই টেস্টেও তুমুল লড়াইয়ে হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
অবশ্য টেস্ট ফরম্যাটে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বহুগুণে এগিয়ে বাংলাদেশ। ২০০০ সালের নভেম্বরে টেস্ট আঙ্গিনায় পথ চলা শুরু হয় বাংলাদেশের। এখন অবধি ১১৪টি ম্যাচ খেলে ফেলেছে টাইগাররা। কিন্তু অভিজ্ঞতার ভান্ডার ভরপুর হলেও, বাংলাদেশের জয় মাত্র ১৩টি, হার ৮৫টি।
বাংলাদেশের অভিষেকের ১৮ বছর পর টেস্ট মর্যাদা পায় আফগানিস্তান। ২০১৮ সালে টেস্ট মর্যাদা অর্জনের পর মাত্র ২টি টেস্ট খেলেছে আফগানরা। গেল বছরের জুনে ব্যাঙ্গালুরুতে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে টেস্ট অভিষেক হয় আফগানিস্তানের। ঐ টেস্টে ইনিংস ও ২৬২ রানে হারে আফগানিস্তান। এরপর চলতি বছর মার্চে দেরাদুনে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নেমেই জয়ের মুখ দেখে আফগানরা। ৭ উইকেটের জয় তুলে নেয় আফগানিস্তান।
অবশ্য অভিজ্ঞতা, পরিসংখ্যান কোনটির উপরই নির্ভরশীল নয় আফগানিস্তান। বাংলাদেশের মত প্রতিপক্ষকে হারিয়ে দেয়ার সামর্থ্য রাখে তারা। কারন সাম্প্রতিক সময়টা ভালো যাচ্ছে না বাংলাদেশের। বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর শ্রীলংকার বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাসে দাগ কেটে রেখেছে। এমনকি সর্বশেষ টেস্ট সিরিজে নিউজিল্যান্ডের কাছে ২-০ ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। ক্রাইস্টচার্চে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচটি সন্ত্রাসী হামলায় পরিত্যক্ত হয়ে যায়।
তবে এসব তথ্য নিয়ে মাথা ঘামাতে চাইবে না নতুন বাংলাদেশ দল। কোচিং প্যানেলে নতুনদের আগমন বাংলাদেশের চেহারা পাল্টে যাবে, সেটিরই অপেক্ষা। এছাড়া বিশ্বকাপের মঞ্চে দুর্দান্ত পারফরমেন্স করা সাকিবের অর্ন্তভূক্তিতে চাঙ্গা এখন বাংলাদেশ দল।
তাই তো নতুন বাংলাদেশের শুরুটা জয় দিয়ে করতে চান ডমিঙ্গো, ‘কেউ হারের জন্য খেলতে নামে না। জয় দিয়ে শুরু করতে পারলে দারুন হবে। বাংলাদেশের হয়ে এটি আমার প্রথম টেস্ট ম্যাচ। আমি দেখতে চাই প্রথম ম্যাচে দল কেমন পারফর্ম করে।’
বাংলাদেশ দল (সম্ভাব্য):
সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), সৌম্য সরকার, সাদমান ইসলাম, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, লিটন কুমার দাস, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোহাম্মদ মিথুন, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মেহেদি হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, নাইম হাসান, আবু জায়েদ রাহি, তাসকিন আহমেদ, এবাদত হোসেন।
আফগানিস্তান দল (সম্ভাব্য):
রশিদ খান (অধিনায়ক), আসগর আফগান, মোহাম্মদ নবী, ইহসানউল্লাহ জানাত, ইব্রাহিম জাদরান, রহমত শাহ, হাশমতউল্লাাহ শহিদি, ইকরাম আলি খিল, জহির খান, জাভেদ আহমাদি, আহমেদ শিরজাদ, ইয়ামিন আহমাদজাই, আফসার জাজাই, শাপুর জাদরান এবং কাইস আহমেদ।