কথায় বলে ‘সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের দশ ফোঁড়’। কিন্তু আমরা তা মানছি কোথায়! কেননা আমাদের সবার মধ্যেই কমবেশি অলসতা বা আলসেমি রয়েছে। আমরা এজন্য দরকারি কাজগুলোও ‘ঠিক আছে, পরে করবো’বলে ফেলে রাখি। এই ধরনের অলসতার কারণে কিন্তু আমরা অনেক সময় বড় রকেমর বিপদে পড়ে যাই। তাই এই বাজে অভ্যাসটি কাটিয়ে তোলা জরুরি। আর এটা তেমন কঠিন কিছু নয়, আন্তরিকভাবে চাইলেই আমরা সময়ের কাজগুলো সময়ে করতে পারবো। এজন্য আমাদের কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে।
১. ইচ্ছাশক্তি-ই শেষ কথা নয়
ক্রীড়া মনোবিদ ইয়ান টেইলরের মনে করেন, ইচ্ছাশক্তিই সবকিছু নয়। তার মতে, ইচ্ছাশক্তি বা আত্মনিয়ন্ত্রণ এক ধরণের মোটিভেশন হতে পারে কিন্তু এটিই সর্বোত্তম পন্থা নয়। তাই শুধু ইচ্ছা শক্তির ওপর নির্ভর না করে কাজের খারাপ দিকটিকে উপেক্ষা করাই ভালো। বরং সেটিকে অপরিহার্য ও গুরুত্বপূর্ণ ভাবতে হবে যা হবে লক্ষ্য অর্জনের একটি অংশ।
২. ফেলে রাখা কাজে ইতিবাচক ভাবুন
আলস্য বা সময় ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা সমস্যা নয়। কেবল আপনি যদি ভেবে থাকেন একাজে আপনি সফল হবেন না, কেবল তখনই কাজ ফেলে রাখার যুক্তি তৈরি হবে। যদিও এটা একটা বাজে অভ্যাস তৈরি করে। তাই ফেলে রাখা কাজগুলোকে ইতিবাচক ভেবে নিন। ফলে কাজগুলো দ্রুত শেষ হবে এবং আপনিও প্রত্যাশার চেয়ে বেশি আনন্দ পাবেন।
৩. আগাম পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি
আপনি যদি বুঝতে পারেন যে আলসেমি করার একটি প্রবণতা তৈরি হচ্ছে আপনার মধ্যে তাহলে মনে মনে একটি কৌশল ফলো করুন। ধরুন, কেউ আপনাকে সপ্তাহান্তে কোনো মিটিং এর কথা বললো। আপনি তখন মিটিংটি আজ বিকালেই করে ফেলার কথা বলুন। আমেরিকান মনোবিদ পিটার গলউইটজার এ কৌশলের ওপর ৯৪টি সমীক্ষা পর্যালোচনা করেন। তার মতে, যারা এ কৌশলটি অনুসরণ করে তারা অন্যদের চেয়ে লক্ষ্য অর্জনে ২/৩ গুণ বেশি সফল হন।
৪.নিজের ওপর চাপ কমান
কাজটা সহজ করুন। যেমন আপনার সকালে দৌড়ানোর কথা। তো আপনি আগের রাতেই পরিকল্পনা পোশাক ঠিক করে রাখুন। সকালে হাঁটতে না যাওয়া বা দেরি হওয়ার কোনো চান্সই থাকবে না। এভাবে সব কাজের পরিকল্পনা আগের রাতেই টেবিলে চূড়ান্ত করে রাখুন। তাহলে প্রথমেই আপনি ধারণা পেয়ে যাবেন যে, কি দিয়ে কাজ শুরু করবেন। একই সঙ্গে ফোন মিউট করে রাখুন ও সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকুন। ফলে আপনার মনোযোগ পুরোপুরি পরিকল্পনা পূরণের দিকে থাকবে, অন্যদিকে যাওয়ার সুযোগ পাবে না।
৫. নিজেকেই নিজে পুরস্কৃত করুন
কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাইটলিন য়ুলির নতুন এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে তাৎক্ষণিক পুরষ্কার কঠোর পরিশ্রম করতে উদ্বুদ্ধ করে। জটিল কাজ ফেলে রাখা থেকেই আলসেমি শুরু হয়। তাই এর পাল্টা ব্যবস্থা হচ্ছে যথাসময়ে কাজ শেষ করার জন্য নিজেকেই নিজে পুরষ্কৃত করুন।
পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা বলছে জিমে ব্যায়াম করার সময় অডিও বুকস দিলে তা ভালো কাজ করে। অর্থাৎ সেটা তাৎক্ষণিক পুরষ্কার। আপনি একটা কঠিন কাজ শেষ করলেন, তাহলে ওই সপ্তাহে দূৈরে কোথাও থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন।
৬. বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গিকে উৎসাহিত করুন
অনেকেই আমরা বিশ্বাস করি ভবিষ্যতে আমরা অনেক সময় পাবো। আমরা ভাবি আমরা সামনে আরও গোছানো, আরও অ্যাকটিভ হবো কিংবা এমন জীবন যাপন করবো সেখানে কোনো ভুল ত্রুটি থাকবেনা। কিন্তু এটা পুরোপুরি ভুল ধারণা। এসব কারণেই অনেক সময় আমরা বুঝিনা কাজ শেষ করতে কতটা সময় লাগবে। এটাকেই বলে পরিকল্পনাগত ভুল।
৭. নিজেকে ক্ষমা করুন
কথায় বলে, ‘ক্ষমা মহৎত্বের লক্ষণ’। তো সেই ক্ষমা শুধু অন্যের ওপর কেন, নিজের ওপরও খানিকটা বর্ষিত হউক। হাতে থাকা কাজ ঝুলিয়ে রাখলে অনেক সময় নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। যেসব শিক্ষার্থী পরীক্ষার আগে পড়া ঝালিয়ে নিতে পারেনি তাদের ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে যারা আলসেমি জনিত কারণে নিজেকে ক্ষমা করে দেয় তারা পরবর্তী সময়ে ভালো করে।
সিরোইস বলছেন আমরা নিজের ওপর মাঝে মধ্যে যতটা নির্দয় হই, বন্ধুদের ওপরও ততটা হতে পারিনা। তাই আমাদের নিজেদের প্রতিও কিছুটা সহমর্মিতা দেখানো উচিত।
৮. নিজের সম্পর্কে ভালো ধারণা
আপনি যে ভাষা ব্যবহার করেন সেটিও একটি ভিন্নতা তৈরি করতে পারে। তাই নিজের সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখুন। ইয়ান টেইলর বলছেন, এর ফলে আপনার ও আপনার আচরণের মধ্যে একটা সম্পর্ক তৈরি করে। নিজেকেই নিজে পুরুষ্কৃত করুন
সূত্র: বিবিসি বাংলা