নিজ দেশ মিয়ানমারে সেনা ও রাখাইন যুবকদের পাশবিকতা থেকে বাঁচতে সীমান্ত প্রতিবেশি বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গারা। বিশ্ব মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হত্যার বিভীষিকা দেখে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দেন। কিন্তু দিনে দিনে বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গাদের একাংশ। মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে তাদের অপরাধ। রোহিঙ্গাদের মারমুখী আক্রমণ থেকে রেহাই মিলছে না কারোরই।
শুধু নিজ গোত্রের গণ্ডিতে এখন আর সীমাবদ্ধ নেই তাদের অপরাধ কার্যক্রম। ইতিমধ্যে তাদের রোষানলে পড়ে একাধিকবার লাঞ্ছিত হয়েছেন দেশি-বিদেশি সাংবাদিক, এনজিও কর্মী, বিদেশি পরিদর্শক দলের প্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা। সব থেকে চরম বেকায়দায় পড়েছেন স্থানীয়রা।
মালয়েশিয়ায় সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনার অভিযোগ
গত মে মাসে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খুব গুরুত্ব পেয়েছিল খবরটি। রমজান মাসে একাধিক সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনাকারী সন্দেহে চার ব্যক্তিকে আটক করে মালয়েশিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী। আটককৃতদের মধ্যে দু’জন ছিলেন রোহিঙ্গা। পুলিশ জানায়, রোজার সময় কুয়ালালামপুর এবং আশেপাশের এলাকায় অনেক মানুষকে হত্যা ও সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা করছিলো ওই চারজন।
মাদক পাচার
একাধিকবার অভিযানে মাদকসহ আটক হয় রোহিঙ্গা মাদক পাচারকারী দলের সদস্যদের। গত দু’ দিন আগেও টেকনাফে অভিযান চালিয়ে ইয়াবাসহ দুই রোহিঙ্গা মাদক পাচারকারীকে আটক করে কোস্টগার্ড জওয়ানেরা।
বৌদ্ধদের ঘরে আগুন লাগানোর চেষ্টা
এক বৌদ্ধ তরুণ ফেসবুক পোস্টে কোরানের অবমাননা করেছেন- এমন অভিযোগ তুলে ২০১২ সালে রামুতে ৩০০ বছরের পুরোনো এক বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা চালানো হয়। জ্বালিয়ে দেয়া হয় সেই মন্দির। স্থানীয় বৌদ্ধরা তখন থেকেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। রাতে বৌদ্ধদের বাড়িতে আগুন লাগানোর চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে অনেকবার।
জার্মান সাংবাদিকদের ওপর হামলা
গত ফেব্রুয়ারিতে মা ও দুই শিশু কন্যাকে অপহরণের অভিযোগ তুলে কক্সবাজারের উখিয়ায় তিন জার্মান সাংবাদিকসহ চার ব্যক্তির ওপর হামলা চালায় রোহিঙ্গারা। হামলার সময় সাংবাদিকদের গাড়ি ভাংচুর করে লুটপাট চালানো হয়।
হামলা, হত্যাসহ নানা অপরাধ
রোহিঙ্গাদের হামলা, হত্যাসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়ানোর খবর আসছে ২০১৭ সাল থেকে। সে বছর এক মাসে রোহিঙ্গাদের অন্তত ৩০টি অপরাধের ঘটনা রেকর্ড করে টেকনাফ ও উখিয়া থানা। রোহিঙ্গাদের হামলায় তখন কমপক্ষে দু’জন পুলিশও আহত হয়।
ক্রসফায়ারে রোহিঙ্গা ‘সন্ত্রাসী’
সম্প্রতি পুলিশ জানায়, গত দুই বছরে কক্সবাজার এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে ৩৩ জন রোহিঙ্গা। পুলিশের দাবি, নিহতরা বিভিন্ন ধরনের অপরাধকর্মে জড়িত ছিলেন। তবে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস বলেছে, ওই ৩৩ জন ক্যাম্পের বাইরে নিহত হয়েছেন বলে তারা রোহিঙ্গা কিনা সে বিষয়টি নিশ্চিত নয়।
মোবাইল ব্যবহার
রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও গুরুত্ব বিবেচনা, আইন-শৃংখলা রক্ষা ও জনসুরক্ষার স্বার্থে রোহিঙ্গাদের আর মোবাইল ব্যবহারের সুযোগ না দেয়ার জন্য অপারেটরদের নির্দেশনা দিয়েছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, রোহিঙ্গাদের কাছে অন্তত পাঁচ লক্ষ মোবাইল রয়েছে।
রোহিঙ্গা শিবিরে খুন
মাতৃভূমি মিয়ানমার ছাড়তে বাধ্য হয়ে বাংলাদেশে মানবিক আশ্রয় পাওয়া রোহিঙ্গারা ক্যাম্পের ভেতরেই বিভিন্ন সময় অপরাধে জড়িয়েছে।গত দু’ বছরে ক্যাম্পের ভেতরেই খুন হয়েছে ৪৩ জন।
দেহব্যবসায় রোহিঙ্গা নারীরা
রোহিঙ্গাদের অসহায়ত্বের সুযোগও নিচ্ছেন অনেকে। ফলে কক্সবাজারে দেহব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছেন অনেক রোহিঙ্গা মেয়ে। কেউ ইচ্ছায়, কেউ অনিচ্ছায় জড়াচ্ছেন এই পেশায়। কক্সবাজারের কিছু সস্তা হোটেলে রোহিঙ্গা মেয়েরা যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করছেন।