প্রায়শই প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে দুঃস্থ লেখক-সাংবাদিক-শিল্পীদের সুচিকিৎসার জন্য অনুদানের সংবাদ দেখা যায়। কিন্তু ঠিক কোন নীতিমালার ভিত্তিতে কে কখন এরকম অনুদান পাচ্ছেন, এ নিয়ে রয়েছে বিতর্ক।
রোববার প্রধানমন্ত্রী খ্যাতনামা সঙ্গীত শিল্পী এন্ড্রু কিশোরকে তার ত্রাণ তহবিল থেকে অনুদান দেয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু বিতর্ক লক্ষ্য করা যায়। খবর বিবিসি বাংলার।
যাদের আর্থিক সামর্থ নেই, তাদেরকেই প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণ বা বিশেষ তহবিল থেকে এমন অনুদান দেয়া হয়। কিন্তু প্রথম সারির একজন পেশাদার শিল্পীকে এমন অনুদান কেন দেওয়া হলো- তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।
সাবেক সংস্কৃতি মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুজ্জামান নূর বলেছেন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় অনেক সময় শিল্পীদের আবেদনের পরে সেটা যাচাই করে প্রধানমন্ত্রীর বিবেচনার জন্য তার কাছে পাঠিয়ে থাকে। তবে, শিল্পীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় কোন আবেদন ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী নিজে থেকে খোঁজ-খবর নিয়ে অনুদান দিয়ে থাকেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, শিল্পীদের শুধু নয়, অনেক ধরনের মানুষকেই, যারা সংকটে বা সমস্যায় পড়েন, তাদের এই সহায়তা দেয়া হয়। সেখানে শিল্পী, লেখক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা এবং প্রবীণ রাজনীতিকরাসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ এই সহায়তা পেয়ে থাকেন। অনেক সময় প্রধানমন্ত্রী পত্রপত্রিকায় লক্ষ্য করেন যে কেউ হয়তো অসুস্থ। সে শিল্পী হয়তো তাঁর কাছে আবেদনই করেননি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নিজেই কর্মকর্তাদের মাধ্যমে খবর দিয়ে ডেকে নিয়ে এসে অনেক সময় তাকে সহায়তা দিয়েছেন। শিল্পীদের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা বেশি ঘটেছে। আবার কেউ কেউ হয়তো আবেদন করেন, তখন সেটা যাচাই করে সহায়তা দেয়া হয়।
এর আগে চলচ্চিত্র অভিনেতা আহমেদ শরীফকে চিকিৎসার জন্য ৩৫ লাখ টাকা সহায়তা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তখনও সামাজিক মাধ্যমে অনেকে নানান প্রশ্ন তুলেছিলেন। বিভিন্ন সময়ই এই অর্থ সহায়তা যাদের দেয়া হয়েছে, তাদের অনেকে দুস্থ কিনা, এমন প্রশ্ন উঠেছে।
এন্ড্রু কিশোর আদৌ সহায়তা চেয়েছেন কিনা জানা যায়নি।
টিআইবি’র ট্রাস্টিবোর্ডের চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে অর্থ সহায়তা দেয়ার জন্য মনোনীতদের যাচাই করার প্রক্রিয়া বা নীতিমালা সবাই জানতে পারে না, সেজন্য অনেক সময় বিতর্ক সৃষ্টি হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা বাইরে থেকে যেটা দেখছি, যারা এই তালিকা ঠিক করে দিচ্ছেন, তাদের কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ যাদের আছে, তারা পাচ্ছেন। খুবই মাইক্রোস্কোপিক ঘটনা ছাড়া আমরা দেখি না যে যাদের এই সহায়তা পাওয়া কথা, তারা পাচ্ছেন। মানে কোন ক্রাইটেরিয়াতে এই সহায়তা দেয়া হচ্ছে, সেই প্রশ্ন তোলা যায় বলেই হয়তো বিতর্ক উঠছে।
অনেক সময় রাজনৈতিক পরিচয়ও বিবেচনায় আসে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েই জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনু যখন তথ্যমন্ত্রী ছিলেন, তখন আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাংবাদিকদের সংগঠনগুলোর এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের তালিকা করে তাদের অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণ তহবিল থেকে।
সেসময়ও যেসব সাংবাদিক সহায়তা নিয়েছিলেন, তাদের অনেকের অর্থিক সামর্থ্যের বিষয়ে অনেক কথা উঠেছিল।
হাসানুল ইনু বলেছেন, অনেক যাচাই বাছাই করেই প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে অর্থ সহায়তা দেয়া হয়।
তিনি বলেন, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে আমরা দুই লাখ টাকা পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা দিতে পারি। এর বেশি প্রয়োজন হলে, সেটা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণ তহবিলে পাঠানো হয়। সাংবাদিক সমিতির নেতারা এবং তথ্য মন্ত্রণালয় সুপারিশ করে। সুতরাং যাচাই-বাছাই করেই প্রকৃত সাংবাদিকের জন্য এটা পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রী তা বিবেচনা করেন। ফলে এখানে প্রশ্ন তোলার বা বিতর্ক করার কোন সুযোগ নেই।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে, তারা এটুকুই বলেছেন যে, একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে স্বচ্ছ্বতার সাথে প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে অর্থ সহায়তা দেয়া হয়।
আর এই তহবিলও গঠিত হয় ব্যাংক, আর্থিক বা ব্যবসায়িকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির সাহায্য থেকে।