কক্সবাজারে গত সোমবার থেকে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধসের ঘটনায় হতাহত হয়েছে মানুষ। পাহাড়ধসে ঘরবাড়ি বিলীন হওয়ার পাশাপাশি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে সড়ক যোগাযোগও। এরপরও বিভিন্ন পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারী অন্তত ৪০ হাজার মানুষকে সরিয়ে আনা যাচ্ছে না।
গত মঙ্গলবার বিকেল চারটার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের হিমছড়িতে পাহাড়ধসের ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। আহতেরা সবাই সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক ও যাত্রী। এরপর ওই সড়কে কয়েক ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। পরে সেনাবাহিনীর ১৬ ইসিবির প্রকৌশল বিভাগের কর্মীরা মাটি সরিয়ে সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করেন। ২০১০ সালের ১৪ জুন রাতে অতিবৃষ্টিতে হিমছড়ির পাহাড়ধসের ঘটনায় ১৭ ইসিবি ক্যাম্পের ছয়জন সেনাসদস্যসহ আট ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছিল।
গতকাল বুধবার পৃথক পাহাড়ধসের ঘটনায় টেকনাফে মেহেদী হাসান (১১) ও আলিশা (৫) নামে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বিলীন হয় তিনটি ঘর। এই ঘরেই মাটিচাপায় মৃত্যু হয় দুই শিশুর।
পরিবেশ সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজার পৌরসভার অন্তত ১২টি পাহাড়ে বসবাস করছে আড়াই লাখের বেশি মানুষ। এর মধ্যে পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে আছে অন্তত ৪০ হাজার। ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকলে প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা বলেন, গত জুলাই মাসের ভারী বর্ষণে শহরের ১০-১২টি পাহাড়ের বিভিন্ন অংশে ফাটল ধরে ভূমিধস হয়েছিল। পাহাড়ধসে তখন নিহত হয় দুজন। গত তিন দিনের ভারী বর্ষণেও একই পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। কিন্তু কেউ পাহাড় ছাড়তে রাজি হচ্ছে না। গত ১০ বছরে একাধিক পাহাড়ধসের ঘটনায় ছয় সেনাসদস্যসহ অন্তত ৯৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
গতকাল সকালে সরেজমিনে শহরতলীর ফাতেরঘোনা, বৈদ্যঘোনা, মোহাজেরপাড়া, লাইটহাউস, ঘোনারপাড়া, বাদশাঘোনা, পাহাড়তলী ও খাজামঞ্জিল পাহাড়ে দেখা গেছে, পাহাড়ের খাদে অসংখ্য ঝুঁকিপূর্ণ বসতি। এসব পাহাড়ে বসবাস করছে মানুষ।
ফাতেরঘোনার পাহাড়ে তৈরি একটি ঘরের মালিক ছমুদা খাতুন (৫৫)। তাঁর বাড়ি মহেশখালী। পাহাড়ে পাদদেশের ঘরে থাকেন স্বামী ও চার ছেলেমেয়ে। তিনি বলেন, সমুদ্রের প্লাবনে মহেশখালীতে নিজের ভিটেমাটি বিলীন হয়েছে, তাই তিনি পরিবার নিয়ে এই পাহাড়ে আশ্রয় নিয়েছেন। ৩০ হাজার টাকায় একখণ্ড পাহাড়ি ভূমি কিনে তৈরি করেছেন একটি টিনের ঝুপড়িঘর।
বৈদ্যঘোনা পাহাড়ের ঢালুতে ঘর তৈরি করে বসতি করছেন সাধন দত্ত। তিনিও পাহাড় ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে নারাজ। তাঁর ভাষ্য, ‘অনেক কষ্টে ঘরটি তৈরি করেছি। ঘরটি ফেলে অন্যত্র চলে গেলে এটি অন্যরা দখল করে নেবে। তখন মাথা গোঁজার ঠাঁই হবে না।’
জেলা প্রশাসন ও পৌরসভা কার্যালয় সূত্র জানায়, পৌরসভার অভ্যন্তরে ১২টির বেশি পাহাড়ে ভূমিধসের ঝুঁকিতে আছে অন্তত ৪০ হাজার মানুষ। এসব পাহাড়ে ১২ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি তৈরি করে বসতি করছে দুই লাখের বেশি মানুষ। এর মধ্যে অন্তত ৮০ হাজার মিয়ানমারের অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা।
জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ভারী বর্ষণে ভূমিধসে প্রাণহানি ঘটতে পারে, তাই লোকজনকে পাহাড় ছাড়তে অনুরোধ জানিয়ে এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। স্বেচ্ছায় তারা সরে না এলে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, পাহাড় কাটার মাটি বৃষ্টির পানির সঙ্গে ভেসে এসে শহরের নালা-কালভার্ট ভরাট হচ্ছে। ফলে বৃষ্টির পানিতে সয়লাব হবে শহরের অলিগলি। এতে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে।