ভারতের উত্তরতম প্রান্তে লাদাখের প্যাংগং হ্রদের তীরে বুধবার প্রায় সারাদিন ধরে ভারতীয় ও চীনা সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘাত হয়েছে বলে দিল্লিতে সামরিক সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।
তবে দিনের শেষে দুই দেশের সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠকের পর সেই বিরোধের অবসান হয়। এখন পরিস্থিতি সেখানে শান্ত বলেই জানা যাচ্ছে।
গত মাসের ৫ তারিখে ভারত সরকার লাদাখকে একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করার পর এই প্রথম দুই দেশের সেনাবাহিনী কোনো মুখোমুখি সংঘাতে জড়াল।
এর আগেই লাদাখ অঞ্চলকে ভারতের কেন্দ্রীয় শাসনের অধীনে নেয়ার সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছে বেইজিং।
লাদাখের যে প্যাংগং হ্রদের ধারে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে, সেটি দুদেশের বর্তমান সীমান্ত বরাবর অবস্থিত।
প্রায় ১৩৫ কিলোমিটার লম্বা এই সুদীর্ঘ হ্রদটি চীনের তিব্বত থেকে ভারতের লাদাখ পর্যন্ত বিস্তৃত।
ভারত এ হ্রদের এক-তৃতীয়াংশের মতো নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। প্যাংগং লেকের বাদবাকি অংশ রয়েছে চীনের নিয়ন্ত্রণে।
প্যাংগং হ্রদের তীর ঘেঁষে ও হ্রদের বুকেও দুদেশের সৈন্যরা পায়ে হেঁটে বা স্পিডবোটে নিয়মিত টহল দিয়ে থাকে।
দিল্লিতে ‘দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া’ পত্রিকা জানাচ্ছে, বুধবার সকালে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যরা যখন লেকের ধারে রুটিন টহলদারি চালাচ্ছিল তখনই চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) ফৌজ তাদের বাধা দেয়।
এর পরই দুপক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে, দুদেশের সেনাদের মধ্যে হাতাহাতি পর্যন্ত হয়। দুপক্ষই বাড়তি ফৌজ চেয়ে পাঠায়, আর দফায় দফায় এই সংঘাত চলে বুধবার প্রায় সারাদিন ধরেই।
সন্ধ্যায় প্রতিনিধি-পর্যায়ের বৈঠকের পর বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে ‘ডিএসক্যালেট’ ও ‘ডিসএনগেজ’ করা সম্ভব হয়েছে বলে ভারতের সামরিক সূত্রগুলো জানিয়েছে।
ভারত ও চীনের মধ্যে লাদাখে যে ‘লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল’ (প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা) সীমান্তের কাজ করে, দুপক্ষের মধ্যে তার ব্যাখ্যার তারতম্যের কারণেই এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে ভারতীয় সেনাবাহিনীর দাবি।
দুবছর আগে ২০১৭ সালের আগস্ট মাসেও ভারত ও চীনের সেনারা প্যাংগং লেকের ধারে এক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিল।
সেবারের ঘটনায় একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়ে, যাতে দেখা যায় দু’পক্ষের সেনারা পরস্পরকে লাথি ও ঘুষি মারছে বা এমনকি পাথরও ছুঁড়ছে।
সেদিন ছিল ভারতের স্বাধীনতা দিবস (১৫ আগস্ট), আর তখন চীন-ভারত-ভুটানের সীমান্তে বিতর্কিত ডোকলাম উপত্যকায় দুদেশের সেনাদের মধ্যে উত্তেজনাও ছিল চরমে।
দুবছর আগের সেই ঘটনাতেও দুদেশের ব্রিগেডিয়ার পর্যায়ের সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠকের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
যে প্যাংগং হ্রদ নিয়ে ভারত ও চীনের মধ্যে এত বিরোধ, সেটি ব্যাপক পরিচিতি পায় বলিউডে ‘থ্রি ইডিয়টস’ সিনেমাটির সুবাদে।
এই ব্লকবাস্টার মুভিটির ক্লাইম্যাক্স দৃশ্যটির শ্যুটিং হয়েছিল প্যাংগং হ্রদের ধারে ভারতীয় অংশে।
এই পার্বত্য হ্রদটির গাঢ় নীল জলের সৌন্দর্য দেখতে হাজার হাজার ভারতীয় পর্যটক প্রতি বছর লাদাখে আসেন, আর ভারতীয় সেনার তত্ত্বাবধানেই তাদের লেকটি ঘুরে দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে।