যারা অস্ত্রবাজি করেন, যারা ক্যাডার পোষেণ, তারা সাবধান হয়ে যান, এসব বন্ধ করেন—তা না হলে কঠোরভাবে এসব অস্ত্রবাজদের দমন করা হবে বলে নিজের দলের নেতাকর্মীদের হুশিয়ারি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। পাশাপাশি দলীয় পদ ও সরকারের দায়িত্বশীল পদে আসীন আছে তাদেরকে আত্ম অহমিকা ও ক্ষমতার জোরে অর্থ ও দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত না হওয়ার জন্যও আহ্বান জানান তিনি।
বৈঠকে নেতারা জানান দল দল যথাযথ মর্যাদায় দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার জন্মদিন পালন করতে চায়। যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির নানক শেখ হাসিনার জন্মদিন পালন উপলক্ষে মাসব্যাপী কর্মসূচীর কথা উল্লেখ করেন। পরে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও এ কথা উল্লেখ করে বলেন, শনিবার যুবলীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং আলোচনা সভা করেছে। তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চাঁদাবাজির টাকা বৈধ করতে মিলাদ মাহফিল করা হয়েছে। তার জন্য এমন মিলাদ মাহফিল দরকার নেই।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক এখন দিনের বেলায় প্রকাশ্যে অস্ত্র উচিঁয়ে চলেন। এসব বন্ধ করতে হবে। যখন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে তখন কেউ অস্ত্র নিয়ে বের হয়নি, অস্ত্র উচিয়ে প্রতিবাদ করেনি। যখন দলের দুঃসময় ছিল তখন কেউ অস্ত্র নিয়ে দলের পক্ষে অবস্থান নেয়নি। এখন টানা তিনবার সরকারে আছি। অনেকের অনেক কিছু হয়েছে। কিন্তু আমার সেই দুর্দিনের কর্মীদের অবস্থা একই আছে। যারা অস্ত্রবাজী করেন, যারা ক্যাডার পোষেণ, তারা সাবধান হয়ে যান, এসব বন্ধ করুন। তা না হলে যেভাবে কঠোরভাবে জঙ্গী দমন করা হয়েছে, একইভাবে এইসব অস্ত্রবাজদেরও দমন করা হবে।’
এসময় এক যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনে আগেও তাকে সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়নি। ওই কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়। ১১ বছরে এদের অনেকে অর্থবিত্তের মালিক হয়েছে। কিন্তু আমার ত্যাগী কর্মীদের আগের সেই দুরাবস্থা রয়েই গেছে। এরা এখন অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়। কই, বঙ্গবন্ধুকে যখন হত্যা করা হয়েছিল, তখন তো কাউকে অস্ত্র নিয়ে বের হতে দেখা যায়নি।
বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন: এই মেয়াদে তোমরা শুধু একটি জেলা ইউনিটের সম্মেলন করতে পেরেছো। এভাবে তো দল চলতে পারে না।
উপস্থিত নেতারা তখন জাতীয় নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নেতাদের ব্যস্ততার কথা তুলে ধরেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তোমাদের এমন অজুহাত আমি শুনতে চাই না। তোমরা না পারলে বলো আমি দলের নারী নেত্রীদের দায়িত্ব দেবো।
শনিবার বৈঠক শেষে ওবায়দুল কাদের বলেন, বৈঠকে অনেক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। মূলত সাংগঠনিক আলোচনাটাই বেশি হয়েছে। ২০১৬ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর জাতীয় সম্মেলন হয়েছে। এই অক্টোবর মাসে তার তিন বছর হয়ে যাবে। এর মধ্যে কিছু জেলা সম্মেলন, কিছু উপজেলা সম্মেলন অনেকদিন হয়ে গেছে এই সম্মেলনগুলোর কাজ শেষ করা দরকার। সেজন্য জাতীয় সম্মেলনের আগেই বিভিন্ন পর্যায়ের শাখা সম্মেলনগুলো সমাপ্ত করার ব্যাপারে একটা সময়সীমা রেখে জাতীয় সম্মেলনের তারিখ আগামী ডিসেম্বর মাসে, আমাদের বিজয়ের মাসে ২০ ও ২১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। স্থান এখনো ঠিক করিনি। পরে এটা ঠিক করা হবে। তবে আওয়ামী লীগের সম্মেলন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই হয়। ধরে নিতে পারেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই হবে। ২০ তারিখ শুক্রবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে। আমরা তিনটা থেকে শুরু করবো। পরের দিন সকালে কাউন্সিল অধিবেশন হবে।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৬ সালের ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই হিসাবে আগামী ২৩ অক্টোবর এই কমিটির তিনবছর পূর্ণ হবে। ২০১৬ সালের ওই সম্মেলনে টানা অষ্টমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। আর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ওবায়দুল কাদের। সম্মেলনে টানা দুবারের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে সভাপতিমণ্ডলী স্থান দেওয়া হয়। এছাড়া সম্মেলনে ১৯ সদস্যের সভাপতিমণ্ডলীর মধ্যে ১৪ জন এবং ৪ জন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষ পদে নেতাদের নাম ঘোষণা করা হয়। সব মিলিয়ে ২০তম জাতীয় সম্মেলনে ৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের ২১টি পদে নেতা নির্বাচন করা হয়। এরপর ধীরে ধীরে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করে দলটি।