২০১৫ সালের বিশ্বকাপের পর থেকে যেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য ভারত নামটিই একটা জুজুতে পরিণত হয়েছে। সেই ম্যাচের পর থেকে হোক জাতীয় দল কিংবা যুব দল- ভারতের বিপক্ষে নকআউট পর্বের ম্যাচ মানেই যেনো খুব কাছে গিয়ে হেরে বসা। যার সবশেষ উদাহরণ দেখা গেলো শনিবার, কলম্বোয় ভারতের বিপক্ষে যুব এশিয়া কাপের ফাইনাল ম্যাচে।
বছর চারেক আগের বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচে জয়-পরাজয় ছাপিয়ে বড় হয়ে দেখা দিয়েছিল প্রশ্নবিদ্ধ আম্পায়ারিং। ভারতের ইনিংসে সুরেশ রায়না ও রোহিত শর্মা, পরে বাংলাদেশের ইনিংসে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের বিপক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলো যথেষ্ট সংশয় ও সন্দেহ। ঠিক সেই একই চিত্র দেখা গেলো যুব এশিয়া কাপের ফাইনালেও।
মাত্র ১০৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে বিপর্যয়েই পড়েছিল বাংলাদেশের যুবারা। মাত্র ৭৮ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে পৌঁছে গিয়েছিল পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে। তবে সেখান থেকে বাকি থাকা ২৯ রানের দায়িত্ব নিয়েছিলেন দুই বোলার তানজিম হাসান সাকিব ও রাকিবুল হাসান। ধীরস্থির ব্যাটিংয়ে প্রায় ১২ ওভারে ২৩ রান যোগ করেন এ দু’জন। মনে হচ্ছিলো ধীরগতিতে হলেও লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে বাংলাদেশ।
ঠিক তখনই তানজিম সাকিবের বিপক্ষে ভুল এক সিদ্ধান্ত দেন আম্পায়ার। বাংলাদেশ যখন জয় থেকে ৬ রান দূরে, তখন লেগ বিফোরের (এলবিডব্লিউ) সিদ্ধান্ত দেয়া হয় তার বিপক্ষে। অথচ টিভি রিপ্লেতে স্পষ্ট দেখা যায় বলটা লেগেছিল তানজিমের ব্যাটে, স্পষ্ট আওয়াজও পাওয়া যায় ব্যাট-বলে হওয়ার।
তানজিমের এ আউটের পর আর এক রানও করতে পারেনি বাংলাদেশ, হেরে যায় ৫ রানের ব্যবধানে। এছাড়া বাংলাদেশের ইনিংসের শুরুতেও প্রশ্নবিদ্ধ এক সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন আম্পায়াররা।
আজ (রোববার) দেশে ফিরে আম্পায়ারিংয়ের ব্যাপারে নিজেদের অসহায়ত্বের কথা জানিয়েছেন যুব দলের অন্যতম সদস্য, অফ স্পিনার শামীম হোসেন। তার মতে প্রতিপক্ষ ভারত হলেই যেনো আম্পায়ারদের এমন ভুল ও প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্তের মেলা বসে বাংলাদেশের বিপক্ষে।
শামীমের ভাষ্যে, ‘আপনারা সরাসরি খেলা দেখেছেন এবং বুঝতে পেরেছেন ব্যাপারটা। আপনারা আমাদের চাইতেও ভালো দেখেছেন। তখন তো আমরা আর দেখিনি। আমাদের সাথে খেলা হলেই কেন সব সময় এমন হবে? ভারতের সঙ্গে খেলা হলেই দুইটা-একটা বাজে আউট দিয়ে খেলাটা শেষ করে দেয়।’
আম্পায়ারদের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে অসহায়ত্বের কথা বললেও, ভারতীয় দলকে যথাযথ কৃতিত্ব দিতে ভোলেননি শামীম। তিনি বলেন, ‘ভারত ভালো খেলেছে। সব দিক থেকেই ওরা ভালো দল।’
প্রশ্নবিদ্ধ আম্পায়ারিং এক পাশে রেখে চিন্তা করলেও, ওয়ানডে ক্রিকেটে ১০৭ রান খুব বড় কোনো লক্ষ্য নয়। তবু কেনো ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়লো বাংলাদেশ দল? ছোট লক্ষ্যে ম্যাচ জেতার জন্য একটি জুটিই হতো যথেষ্ট। হয়নি সেটিও। প্রতিপক্ষ ভারত বলেই কি এমন হলো? ভিন্ন প্রতিপক্ষ হলে কি সহজেই জিততো বাংলাদেশ?
শামীমের উত্তর, ‘ভারত ছাড়া (প্রতিপক্ষ) অন্য কেউ হলে কি হতো এটা বলা তো যায় না। ব্যক্তিগতভাবে আমাদের সবার পারফরম্যান্সই ভালো। সবকিছুই ভালো ছিলো। শুধু ফাইনাল ম্যাচটি খারাপ হয়ে গেছে আমাদের সবার।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনি যদি আগের সিরিজগুলো দেখেন, আমরা অনেক ভালো ক্রিকেট খেলেছি। সবকিছুতেই আমাদের উন্নতি হচ্ছে। এশিয়া কাপে আমরা ভালোই খেলেছি। খারাপ যে খেলেছি, তা নয়। ম্যাচটি দুর্ভাগ্যবশত হেরে গেছি। কিছু করার নেই। অসাধারণ বোলিং করেছে আমাদের বোলাররা। অনেক ভালো বোলিং করেছে। সবকিছুই ভালো হয়েছে আমাদের।’