বগুড়ার শাজাহানপুরে একটি বিলের পাড়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে বিপুল পরিমাণ টুকরো টাকা। কুচি কুচি করে কাটা ওই টাকা দেখে শোরগোল পড়ে যায় পুরো এলাকায়। পরিবর্তীতে এনিয়ে হুলুস্থুল কাণ্ড বেঁধে যায়।
খবর পেয়ে প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থা আর সংবাদকর্মীরা গিয়ে ভিড় করেন সেখানে। এছাড়া উৎসুক জনতাও দলে দলে ছুটে যান সেই বিলের পাড়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে টাকা পড়ে থাকার ঘটনাটি।
পরে খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের ছেঁড়াফাটা ও পরিত্যক্ত ওই টাকাগুলো পাঞ্চিং (কেটে টুকরো করা) করে বগুড়া পৌরসভাকে তা অপসারণ করতে বলে। পৌর কর্তৃপক্ষ সেই টাকা নিয়ে গিয়ে ওই স্থানে ফেলে দেয়।
মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে শাজাহানপুর উপজেলার খোট্টাপাড়া ইউনিয়নের চান্দাই গ্রাম সংলগ্ন খাউরা বিলের পাড়ে টাকাগুলোর সন্ধান পাওয়া যায়। পরিত্যক্ত ওই টাকার একাংশ বিলের পানিতেও পড়েছিল।
চান্দাই গ্রামের বাসিন্দা নয়ন মিয়া, আবদুল জলিল, বিলকিস বেগম, জালসুকা গ্রামের রমজান আলী ও ফজলুল হক জানান, সোমবার সকাল থেকে তারা বিলের পানিতে এবং পাড়ে টাকার টুকরোগুলো পড়ে থাকতে দেখেন।
গ্রামের অনেকেই জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করার জন্য সেসব টাকা বস্তায় করে বাড়ি নিয়ে যায়। পরে আশপাশের গ্রামবাসী সেই টাকা দেখতে বিলের পাড়ে ভিড় জমায়।
এদিকে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে বিষয়টি জানার পর শাজাহানপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পুলিশ প্রথমে ওই টাকার উৎস সম্পর্কে কিছুই জানতে পারেনি। এ কারণে সেখান থেকে কয়েক বস্তা টুকরো টাকা নমুনা হিসেবে সংগ্রহ করে পুলিশ তা থানায় নেয়।
পরে গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা এবং কয়েকজন সংবাদকর্মী খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হন এগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের ছেঁড়াফাটা পরিত্যক্ত টাকা। তারাই পাঞ্চিং করা টাকাগুলো পৌর কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে অপসারণ করে সেখানে ফেলেছে।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) সনাতন চক্রবর্তী জানান, শুরুতেই টাকাগুলো নিয়ে নানা ধরনের গুজব শুরু হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া গেছে সেগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের বাতিল টাকা।
এব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক বগুড়া শাখার নির্বাহী পরিচালক জগন্নাথ ঘোষ সংবাদ কর্মীদের জানান, বেশকিছু টাকা বাতিল এবং অপ্রচলনযোগ্য হওয়ায় তা ধ্বংস করা হয় (পাঞ্চিংয়ের মাধ্যমে টুকরো করা)।
তিনি বলেন, পরবর্তীতে ওই টাকাগুলো অপসারণ করার জন্য পৌরসভাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারা ব্যাংক থেকে টাকাগুলো অপসারণ করে সম্ভবত সেখানে ফেলেছে।
বগুড়া পৌরসভার কনজারভেন্সি পরিদর্শক মামুনুর রশিদ জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক বগুড়া শাখার যুগ্ম-ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শাজাহান স্বাক্ষরিত চিঠি দিয়ে পৌরসভাকে জানানো হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক বগুড়া ও খুলনা শাখার বাতিল ও অপ্রচলনযোগ্য টাকাগুলো বর্জ্য হিসেবে গৃহীত হয়েছে। সেগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক বগুড়া শাখার নির্দিষ্ট ডাস্টবিন থেকে অপসারণ করতে অনুরোধ করা হয়।
তিনি বলেন, গত ২০ আগস্ট স্বাক্ষরিত ওই চিঠি পৌরসভা ২২ আগস্ট পাওয়ার পর গত রবিবার পৌরসভার ট্রাকযোগে তিন ট্রাক টাকার টুকরো ওই বিলের ধারে ফেলে দেওয়া হয়।