প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার স্বার্থে মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে বসবাসরত বিহারিদের স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তার আগে পর্যাপ্ত নাগরিক সুবিধাসহ বসিলায় বিহারিদের জন্য আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ হাজার ১০১ কোটি ২৩ লাখ টাকা।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিলে চলতি বছরের জুলাই থেকে শুরু হয়ে আগামী ২০২২ সালের জুনে এর কাজ শেষ করার কথা। এটি বাস্তবায়ন করবে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। পুরো ব্যয় সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকেই মেটানো হবে বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর ভারত থেকে লাখ লাখ মুসলমান তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশের প্রধান প্রধান শহরের সরকারি খাসজমিতে বসবাস শুরু করে। ১৯৫৮ সালে তৎকালীন ‘মিনিস্ট্রি অব ওয়ার্কস, পাওয়ার অ্যান্ড ইরিগেশন’-এর অধীনে ‘হাউজিং উইং’ প্রতিষ্ঠা করে বিহারিদের পুনর্বাসনের কার্যক্রম শুরু হয়।
বর্তমানে দেশব্যাপী ১১৬টি বিহারি ক্যাম্পের মধ্যে মোহাম্মদপুরস্থ জেনেভা ক্যাম্প সবচেয়ে বড়। ১৪ দশমিক ৫০ একর জমির ওপর নির্মিত ক্যাম্পটিতে বসবাস করে প্রায় ৮ হাজার ৮০০ পরিবারের ৩৫ হাজার লোক। প্রতিটি পরিবারই থাকা-খাওয়াসহ আনুুষঙ্গিক কাজকর্ম সম্পন্ন করে ৪ বর্গমিটারের একটি কক্ষেই, যা একেবারেই অমানবিক।
তা ছাড়া জেনেভা ক্যাম্প এলাকাটি প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনের অনেক কাছে। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার স্বার্থেও ক্যাম্পে বসবাসরতদের অন্যত্র স্থানান্তর খুবই জরুরি। এ পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি অর্থায়নে ‘ঢাকার মোহাম্মদপুরস্থ জেনেভা ক্যাম্পে বসবাসরত অবাঙালিদের বসিলায় পুনর্বাসনের জন্য আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ’ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে।
শহরের সুযোগ সুবিধা সংবলিত আধুনিক জনবসতি গড়ে তোলা, বিহারিদের যুক্তিসঙ্গত ভাড়ায় একটি আবাসিক ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা করা ও আবাসিক সুবিধার পাশাপাশি স্থায়ী-অস্থায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা। আর এটি বাস্তবায়ন হলে বিহারিদের জীবনযাত্রা সহজতরের পাশাপাশি জেনেভা ক্যাম্পের জায়গার সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত হবে।
কেরানীগঞ্জের আহাদীপুর মৌজার এক হাজার একর জমির ওপর প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। পর্যায়ক্রমে নির্মাণ হবে ৮ হাজার ৮০০টি আবাসিক ফ্ল্যাট। তবে প্রথম পর্যায়ে ২০ তলাবিশিষ্ট পাঁচটি আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি ভবনে থাকবে ৬২৫ বর্গফুট আয়তনবিশিষ্ট ১৫২টি ফ্ল্যাট। এতে ৭৬০টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে। প্রকল্পের আওতায় বাণিজ্যিক ভবনের পাশপাশি থাকবে খেলার মাঠও। প্রতিটি প্লটের সঙ্গে রাস্তা, বিদ্যুৎ, ড্রেন ও পানি সরবরাহ লাইন স্থাপন করা হবে।
এ ছাড়াও পাম্প হাউস, ইলেকট্রিক সাবস্টেশন, ছয় তলার ফাউন্ডেশনের দ্বিতলবিশিষ্ট বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করা হবে। সেখানে বিহারিদের পেশা অনুযায়ী দোকান ও বাণিজ্যিক স্পেস বরাদ্দের সুযোগ রাখা হবে, যাতে তারা জীবিকা নির্বাহ করতে পারে। এ ছাড়া প্রকল্প এলাকায় ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, সমাজসেবা অধিদপ্তর, মহিলা ও শিশুবিষয়ক অধিদপ্তর, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় দপ্তরগুলোকে জমি বরাদ্দ দেওয়া হবে।
এদিকে সরকারি হিসাবে জেনেভা ক্যাম্পের জমির বর্তমান মূল্য প্রায় ১৬৩ কোটি টাকা (সোয়া ১১ লাখ টাকা কাঠা ধরে)। জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের হিসাবমতে, ওই জায়গার ওপর স্বল্প ও মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য পরিকল্পিত আবাসন গড়ে তুললে আনুমানিক ৪০টি ভবনে ২ হাজার ২০০টি ফ্ল্যাটের সংস্থান করা সম্ভব। এর মোট মূল্য হবে প্রায় ২ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা।
সূত্র: আমাদের সময়