এশিয়া উপমহাদেশে যাকে সেরাদেরও সেরা রকস্টার বলা হয় তিনি মাহফুজ আনাম জেমস। সঙ্গীতাঙ্গনে তাকে 'গুরু' বলেই অভিহিত করা হয়। যার গান ভক্তদের নিয়ে যায় ভাবের অন্য জগতে। তিনি যেমন প্রেমে নন্দিত, তেমনি তার কণ্ঠে ‘মা’, ‘বাবা’, ‘বাংলাদেশ’ গানগুলোও দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
আজ ৫৫ বছরে পা দিলেন দেশের শীর্ষ ব্যান্ডদল ব্যান্ড নগর বাউল এর কর্ণধার এবং ভোকালিষ্ট মাহফুজ আনাম জেমস। গতকাল রাত থেকেই ভক্ত অনুরাগীদের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছেন এই ব্যান্ড তারকা।
প্রতিবছর এই দিনটি তার শুরু হয় ভক্তদের শুভেচ্ছা, ভালোবাসা আর উপহার পাওয়ার মধ্য দিয়ে। অবশ্য দিন শুরুর আগেই দেশের আনাচে-কানাচে পৌঁছে দেওয়া হয় তার জন্মদিনের খবর। নগর বাউলের ভক্ত-অনুরাগীরা এর আগে কখনও বিলবোর্ড বানিয়ে, ট্রাকভর্তি কেক নিয়ে রাজধানী চষে বেড়িয়েছেন। ব্যানার, পোস্টার আর শত শত প্রতিকৃতি বানিয়েও দেশজুড়ে ছড়িয়ে দিয়েছেন ব্যান্ড সঙ্গীতের গুরুখ্যাত এই শিল্পীর জন্মদিনের খবর। দেশের নানা প্রান্ত থেকে হাজার হাজার ভক্ত এসে জেমসের কলের গান রেকর্ডিং স্টুডিওতে উদযাপন করেছেন শিল্পীর জন্মদিন। ভক্তদের এসব আয়োজন কখনও পাগলামি আবার কখনও বাড়াবাড়ি বলেও তাদের নিরাশ করেননি জেমস। কিন্তু এবার ভক্তরা প্রিয় শিল্পীর জন্মদিনে তাকে পাশে পাচ্ছে না। তবে নিজের জন্মদিন নিয়ে এবার কোন আয়োজন করছেন না তিনি।
জেমস গণমাধ্যমকে বলেন, 'মন ভালো নেই, তাই ঘটা করে নিজের জন্মদিন উদযাপন করতে চাই না। গত বছরের এই মাসে শিল্পীজীবনের দীর্ঘদিনের সফরসঙ্গী, ভাই ও বন্ধু আইয়ুব বাচ্চুকে হারিয়েছি। কয়েকদিন পর তার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। এমন একটা সময়ে দাঁড়িয়ে নিজের জন্মদিন উদযাপন করার কোনো ইচ্ছা নেই।'
জেমস ও নগর বাউল ব্যান্ডের ব্যবস্থাপক রুবাইয়াৎ ঠাকুর রবিন জানান, জন্মদিন উপলক্ষে আজ কোনো আয়োজন করছেন না জেমস। শুধু তাই নয়, তিনি ভক্তদেরও জানিয়ে দিয়েছেন, আজ তাদের কারও সঙ্গে দেখা করা, কেক কাটা বা অন্য কোনো আয়োজনে অংশ নেবেন না। আইয়ুব বাচ্চু স্মরণে আজকের দিনটি নীরবে-নিভৃতে কাটাতে চান।
১৯৬৪ সালের এই দিনে নওগাঁয় জন্মগ্রহণ করেন জেমস। তার বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে। জেমসের বাবা ছিলেন একজন সরকারি কর্মচারি, যিনি পরবর্তীতে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরিবারের অমতেই সংগীত চর্চা শুরু করেন জেমস। বাবার সঙ্গে গান নিয়ে অভিমান করে বাড়ি ছেড়ে চলে আসেন। সংগীতের নেশায় ঘর ছেড়ে পালিয়ে যান।
১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ফিলিংস’ নামক একটি ব্যান্ড। জেমস নিজেই ব্যান্ডের প্রধান গিটারিস্ট ও ভোকালিস্ট ছিলেন। ১৯৮৭ সালে তার প্রথম অ্যালবাম ‘ষ্টেশন রোড’ প্রকাশ পায়। পরে ১৯৮৮ সালে ‘অনন্যা’ নামের অ্যালবাম রিলিজ করে সুপার হিট হয়ে যান জেমস। এরপর ১৯৯০ সালে ‘জেল থেকে বলছি’, ১৯৯৬ ‘নগর বাউল’, ১৯৯৮ সালে ‘লেইস ফিতা লেইস’, ১৯৯৯ সালে ‘কালেকশন অফ ফিলিংস’ অ্যালবাম গুলো ফিলিংস ব্যান্ড থেকে বের হয়।
এছাড়াও জেমসের অন্যান্য অ্যালবামগুলো হল নগর বাউল থেকে ‘দুষ্টু ছেলের দল’, ‘বিজলি’। একক অ্যালবাম ‘অনন্যা’, ‘পালাবি কোথায়’, ‘দুঃখিনী দুঃখ করোনা’, ‘ঠিক আছে বন্ধু’, ‘আমি তোমাদেরই লোক’, ‘জনতা এক্সপ্রেস’, ‘তুফান’, ‘কাল যমুনা’ ।
এরপর তিনি চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেও সফল হয়েছেন। ‘দেশা দ্য লিডার’ ছবির জন্য গান করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। জেমসের জনপ্রিয়তা শুধু দেশে নয়, আর্ন্তজাতিক পরিমণ্ডলেও ব্যাপক জনপ্রিয় এই তারকা।