দুই প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বৈঠকের পরই দোষারোপ শুরু
সীমান্তে উত্তেজনার মধ্যে গত শুক্রবার উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বসে ভারত ও চীন। রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) বৈঠকের ফাঁকে এদিন বৈঠক করেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ও চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেংহে। দুই প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বৈঠক ঘিরে জল্পনা ছিল তুঙ্গে। প্রায় আড়াই ঘণ্টার বৈঠকে তাঁরা সীমান্তে শান্তি ফেরানোর ইঙ্গিত দিলেও পরদিন গতকাল শনিবার দুই পক্ষই সীমান্ত সংঘাতের জন্য পরস্পরকে দোষারোপ করেন।
লাদাখ সীমান্তে অশান্তির দায় ভারতের ঘাড়ে চাপিয়ে চীন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, তারা এক ইঞ্চি জমিও ছাড়বে না। পাল্টা বিবৃতিতে ভারত বলেছে, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ও অখণ্ডতা বজায় রাখতে ভারতও বদ্ধপরিকর। ভারতীয় এলাকাগুলো থেকে কত দ্রুত চীন তার সেনাবাহিনী সরিয়ে নিচ্ছে তার ওপরই নজর রাখছে দিল্লি। এদিকে দুই দেশের মধ্যে বিবাদ থামাতে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, ভারত ও চীনের সীমান্ত পরিস্থিতি খুব খারাপ এবং আমেরিকা দুই দেশের মধ্যে শান্তি ফেরানোর কাজে সাহায্য করতে পারলে খুব খুশি হবে।
অনুপ্রবেশ পাল্টা অনুপ্রবেশের অভিযোগ নিয়ে গত মে মাস থেকে লাদাখ সীমান্তে চীন ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। ওই উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করে গত ১৫ জুন। এদিন লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় দুই দেশের সেনাদের মধ্যে মারামারিতে ২০ ভারতীয় সেনা নিহত হয়। চীনও তাদের সেনাদের হতাহত হওয়ার কথা স্বীকার করেছে, যদিও তারা সংখ্যা প্রকাশ করেনি। কোনো আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার ছাড়াই ওই সংঘাতে এত সেনা হতাহত হয়। সংঘাতের পর উভয় দেশ প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলএসি) অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে। মে মাসের পর দুই দেশের সামরিক পর্যায়ে বেশ কয়েকবার আলোচনা হলেও শুক্রবারই প্রথম দুই দেশের এত শীর্ষপর্যায়ের বৈঠক হলো।
এসসিও বৈঠকে অংশ নিতে মস্কোয় যান দুই দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। সেখানে বৈঠকের ফাঁকে সীমান্ত বিবাদের মীমাংসার লক্ষ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসেন তাঁরা। বৈঠক শেষে গতকাল ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘উভয় পক্ষই একটি বিষয়ে একমত হয়েছে যে তারা কেউই সীমান্ত পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠতে পারে বা সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা ছড়াতে পারে এমন কোনো কিছু করবে না।’ মন্ত্রণালয়ের এক টুইট বার্তায় বলা হয়, ‘বৈঠকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, ভারতীয় সেনা এলএসিতে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো রকম আপস করা হবে না।’
কিন্তু গতকাল সকালে চীন এক বিবৃতিতে বলে, ‘?ভারত ও চীন সীমান্তে উত্তেজনার কারণটা পরিষ্কার। এর জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়ী ভারত।’? একই সঙ্গে চীন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, ‘?চীন নিজেদের জমির এক ইঞ্চিও ছাড়বে না। চীনের সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব ও সীমান্ত রক্ষা করার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী, সমর্থ ও তৈরি।’? বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, ‘?চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে যা আলোচনা হয়েছিল, তা বাস্তবায়িত করুক ভারত। আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান হোক। দুই দেশেরই নিজেদের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি ঘটানো উচিত। দুই দেশের সম্পর্ক অবনতি হোক, এমন কোনো পদক্ষেপ কারোরই নেওয়া উচিত নয়। স্থিতিশীলতা, শান্তি ও সীমান্তের সামগ্রিক অবস্থা উন্নত করতে উদ্যোগী হওয়া উচিত দুই দেশের।’?
চীনের ওই বিবৃতির পর ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষে পাল্টা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বিপুল সেনা সমাবেশ, আগ্রাসী মনোভাব ও স্থিতাবস্থা ভেঙে দেওয়ার ব্যাপারে চীনের তৎপরতা দ্বিপক্ষীয় চুক্তির শর্তগুলো পুরোপুরি লঙ্ঘন করছে।’ বিবৃতিতে এও জানানো হয়েছে, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এবং অখণ্ডতা বজায় রাখতে ভারতও বদ্ধপরিকর। ভারতীয় এলাকাগুলো থেকে কত দ্রুত চীন তার সেনাবাহিনী সরিয়ে নিচ্ছে তার ওপরই নজর রাখছে দিল্লি। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলএসি) শান্তি ও সুস্থিতি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিরিয়ে আনতে সার্বিকভাবে সেনা অপসারণের জন্য কূটনৈতিক ও সামরিক বাহিনী স্তরে দুই দেশের আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাওয়াটাই এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান পরিস্থিতি দায়িত্ব নিয়ে সামলানো উচিত। সীমান্তে উত্তেজনা ছড়াতে পারে এমন কোনো পদক্ষেপ দুই দেশের কারোরই নেওয়া উচিত নয়। সূত্র : এএফপি, আনন্দবাজার।
II কালের কন্ঠ II