সারা বিশ্বের সাথে বিচ্ছিন্নতার আশংকা যুক্তরাজ্য, ঘটতে পারে খাদ্য সংকট
মহামারি করোনার নতুন প্রকোপে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে যুক্তরাজ্য।
এ অবস্থায় করণীয় নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেছে বরিস সরকার। বিশেষ করে বড়দিনের সময়টাতে খাদ্য সঙ্কটে পড়তে পারে ব্রিটেনবাসী এমন আভাস পেয়েই মন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনায় জনসন। কিছু আমদানিকৃত খাদ্য সামগ্রী দু'সপ্তাহের মধ্যেই শেষ হতে পারে এমন আশঙ্কা রয়েছে।
তবে এ বিষয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের মুখপাত্র বলছেন, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি বড়দিনে খাদ্য সংকট এড়াতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের সাথে একের পর এক বিভিন্ন দেশের ফ্লাইট বাতিলের হিড়িক শুরু হয়েছে। সম্প্রতি এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে কানাডা। আগামী ৭২ ঘণ্টার জন্য যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যাত্রীবাহী সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে বলে কানাডার স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিশ্চিত করেছেন।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে নতুন প্রজাতির করোনাভাইরাস শনাক্তের খবর সামনে আসতেই বিভিন্ন দেশ যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ফ্লাইট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে শুরু করে। ইউরোপীয় দেশগুলো যুক্তরাজ্যের ভ্রমণকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর কানাডাও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ফ্লাইট বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে।
যুক্তরাজ্যের সঙ্গে প্রথম ফ্লাইট বাতিলের ঘোষণা দেয় নেদারল্যান্ডস। এর পরেই একই পথে হাঁটতে দেখা গেছে বেলজিয়াম, ইতালি, জার্মানি ও ফ্রান্সকে। তারাও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ফ্লাইট বাতিল করেছে। রবিবার রাত থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার জন্য যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ফ্লাইট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ফ্রান্স। সড়ক, সমুদ্র , রেল ও আকাশপথে মালামাল বহন করে নিয়ে আসা লোকজনও এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
জরুরি বৈঠক ডেকেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। আগামী ৪৮ ঘণ্টার জন্য যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ফ্রান্স তাদের সীমান্ত বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়ার পরপরই এই বৈঠক ডাকা হয়েছে।
রবিবার থেকেই যুক্তরাজ্যের ওপর একের ওপর এক নিষেধাজ্ঞা আসতে শুরু করে। ফ্রান্স তাদের সীমান্ত বন্ধ রাখায় ইংল্যান্ডের উপকূলীয় শহর ডোভার থেকে কোনো লরি বা যাত্রীবাহী ফেরি ফ্রান্সের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়নি। আগামী ৪৮ ঘণ্টা এ ধরনের পরিবহন বন্ধ থাকছে বলে জানানো হয়েছে।
ফ্রান্স বলছে, যুক্তরাজ্যে সম্প্রতি নতুন প্রজাতির করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর এই পদক্ষেপ গ্রহণ করার প্রয়োজন ছিল। ইতোমধ্যেই নেদারল্যান্ডস জার্মানি, ইতালি, বেলজিয়াম, আইরিশ প্রজাতন্ত্র, তুরস্ক এবং কানাডা যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ফ্লাইট চলাচল বাতিল করেছে। সুইজারল্যান্ডও এই তালিকায় রয়েছে। অপরদিকে হংকং জানিয়েছে, সোমবার রাত থেকে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ফ্লাইট চলাচল বাতিল হচ্ছে।
রবিবার মধ্যরাত থেকে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বিমানের ফ্লাইট ও ট্রেন বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছে বেলজিয়াম। দেশটির প্রধানমন্ত্রী আলেক্সান্ডার ডে ক্রু রাষ্ট্রায়ত্ব টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে বলেন, পূর্ব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আরও পদক্ষেপ নিতে হবে কিনা তা আমরা দেখব।’ অন্যান্য দেশগুলো সীমিত সময়ের জন্য যুক্তরাজ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও বেলজিয়াম আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা জারি রাখবে বলে জানানো হয়েছে।
অস্ট্রিয়াও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ফ্লাইট বাতিলের পরিকল্পনা করছে বলে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। অপরদিকে স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নভূক্ত দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের ভিত্তিতে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ফ্লাইট বন্ধের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে চান। সুইডেন জানিয়েছে, যুক্তরাজ্য থেকে তাদের দেশে প্রবেশের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
রোমানিয়া, লিথুয়ানিয়া, লাটভিয়া, এস্তোনিয়া, বুলগেরিয়া ও চেক প্রজাতন্ত্রও যুক্তরাজ্যের ফ্লাইটের ওপর নিষেধাজ্ঞার পরিকল্পণা ঘোষণা করেছে।ব্রিটেনে শনাক্ত হওয়া করোনার নতুন প্রজাতিটি যে খুব বেশি প্রাণঘাতী বা ভ্যাকসিনের সঙ্গে ভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে এটা আরো ৭০ শতাংশ বেশি সংক্রামক বলে জানানো হয়েছে। করোনার পুরোনো প্রজাতির চেয়ে এটি অনেক দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে নতুন করে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এদিকে ট্রান্সপোর্ট কানাডা বলছে, কার্গো বিমান বা জরুরি কাজে নিয়োজিত বিমানের ফ্লাইট নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকবে না। তবে যাত্রীবাহী সব ধরনের বিমানে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে দেশটি বলছে, বেসামরিক বিমান চলাচলে নিরাপত্তা ও জনগণের সুরক্ষার জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি ছিল। স্থানীয় সময় রোববার মধ্যরাত থেকেই কানাডার আরোপ করা বিধি-নিষেধ কার্যকর হয়েছে।
ব্রিটেনে শনাক্ত হওয়া করোনার নতুন প্রজাতিটি যে খুব বেশি প্রাণঘাতী বা ভ্যাকসিনের সঙ্গে ভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে এটা আরো ৭০ শতাংশ বেশি সংক্রামক। করোনার পুরোনো প্রজাতির চেয়ে এটি অনেক দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে নতুন করে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা রোববার বিকেলে নতুন প্রজাতির এই করোনাভাইরাস নিয়ে আলোচনা করেছেন। এরপরেই যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ফ্লাইট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, কানাডায় এখনও পর্যন্ত কারো দেহে নতুন প্রজাতির এই করোনাভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়েনি। তবে এই প্রজাতির উপস্থিতি আছে কিনা তা শনাক্ত করতে কাজ করে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
তারা বলেছে, ‘জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে, ব্রিটেনের সাথে জনগণ আকাশ বা সমুদ্রপথে ভ্রমণ করা উচিত নয়’। এসব কারনে সব্জি, কাঁচা মাল নষ্ট হবে রাস্তায় আর অন্য খাদ্য প্রবেশ না করতে পারলে ব্রিটেনে খাদ্য সংকট সৃষ্টি হওয়ার ও আশংকা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে কোনো খাদ্যসংকট হবে না বলে আশ্বস্ত করেছেন, পরিবহনবিষয়ক মন্ত্রী গ্র্যান্ট শ্যাপস। তিনি জানান, সীমান্ত বন্ধ থাকলেও ওষুধ ও খাবারের কোনো ঘাটতি হবে না।
সূত্র : ব্লুমবার্গ, গার্ডিয়ান, ফরচুন।