হালদায় জলচর পাখি 'লালপা পিউ'।
পাখির বাংলা নাম ‘লালপা পিউ’। ইংরেজি নাম ‘কমন রেডশ্যাঙ্ক’। বৈজ্ঞানিক নাম ‘ট্রিংগা টোটেনাস’। গোত্রের নাম ‘স্কোলোপাসিদি’। এদের অন্য একটি প্রজাতির নাম সবুজপা পিউ।
এ প্রজাতির পাখির গড় দৈর্ঘ্য ২৭-২৯ সেন্টিমিটার। মাথা, ঘাড়, বুক শরীরের ওপরের পালক বাদামি-ধূসর রেখা। ডানার পেছনের পালক সাদা। তলপেট থেকে বস্তিপ্রদেশ পর্যন্ত সাদাটে। ঠোঁট লম্বা সোজা।
ঠোঁটের গোড়া কমলা-লাল, অগ্রভাগ কালচে। শরীরের তুলনায় পা খানিকটা লম্বা। পায়ের বর্ণ কমলা-লাল, নখ কালো। চোখের বলয় সাদা। প্রজননের সময় গায়ের রঙ কিছুটা গাঢ় দেখায়।
সম্প্রতি এক পড়ন্ত বিকালে এমনি অতি সুলভদর্শন জলচর পাখি ‘লালপা পিউর’ দেখা মিলল দেশের অন্যতম মিঠা পানির প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র চট্টগ্রামের হালদা নদীর গড়দুয়ারা সোনাইর চর এলাকায়।
যদিও এদের আবাসস্থল মধ্য-পূর্ব এশিয়া থেকে বৈকালিয়া হ্রদ পর্যন্ত।
শীতকালে পরিযায়ী (বসবাসের জন্য অন্যদেশে গমনকারী) হয়ে বিভিন্ন দেশে যায়। বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, দক্ষিণ চীন, মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইনে বেশি বিস্তৃতি ঘটে বলে জানালেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবের সমন্বয়কারী হালদা গবেষক ড. মঞ্জুরুল কিবরীয়া।
তিনি আরও জানান, শান্ত স্বভাবে এ পাখিগুলো কারও সঙ্গে গায়ে পড়ে ঝগড়াঝাটি করে না। চেহারা মায়াবী ধাঁচের। নজরকাড়া চোখের গড়নও। যদিও তারা শীত মৌসুমে দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। ওই সময় জলাশয় এলাকায় ছোট-বড় দলে শিকার খুঁজতে দেখা যায়। উপকূলীয় অঞ্চলে বেশি নজরে পড়ে। জোয়ার-ভাটার খাড়ির মুখে দাড়িয়ে খাবারের সন্ধান করে। এদের প্রধান খাবার ছোট মাছ ও জলজ পোকামাকড়।
লালপা পি-উ’ কণ্ঠস্বর বেশ চমৎকার। অনেকটা বাঁশির সুরের মতো আওয়াজ করে। ‘টিইউ-টিইউ-টিইউ’ সুরে ডেকে ওঠে। হঠাৎ শুনলে যে কেউ বাঁশির আওয়াজ বলে ভুল করে। বিশেষ করে নির্জনে সুর কানে এলে মন বিশাদে ভরে ওঠে।
ভয় পেলে বা উড়তে উড়তে পিউ-পিউ সুরেও ডাকে। সুরে মুগ্ধ হয়ে দেশের বিশিষ্ট পাখিবিশারদরা এদের নাম দিয়েছেন ‘মোহন বেণু’।
তাদের প্রজনন মৌসুম বসন্তকাল। ডিম পাড়ে ৩-৫টি। স্ত্রী-পুরুষ পালা করে ডিমে তা (তাপ) দেয়। ফুটতে সময় লাগে ২৩-২৫ দিন। প্রজননের আগ মুহূর্তে নিজেদের বসতভিটায় চলে যায়। ভাসমান জলদামের (জলজ তৃণবিশেষ) ওপর তারা বাসা বাঁধে। বাসা বানাতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে জলজ ঘাস ও লতাপাতা।
তথ্যসূত্র: যুগান্তর।