বিভিন্ন কারণে জরায়ুর স্থানচ্যুতি ঘটতে পারে। লিগামেন্ট নামক দড়ির মতো কাঠামো দিয়ে জরায়ু নিজেকে স্ব-স্থানে ধরে রাখে। যেকোনো কারণে এই কাঠামো দুর্বল হয়ে গেলে জরায়ুর অবস্থান স্বাভাবিক থাকে না। নিচে চলে আসে।
এর কারণ :
১. জন্মগতভাবে লিগামেন্ট দুর্বল থাকলে।
২. কম সময়ের ব্যবধানে ঘন ঘন সন্তান প্রসবে।
৩. কোনো কারণে তলপেটের চাপ বাড়লে।
৪. প্রসব ব্যথায় জরায়ুর মুখ সম্পূর্ণ খোলার আগেই অনভিজ্ঞ ধাত্রী জোর করে প্রসব করানোর চেষ্টায় বারবার চাপ দিতে থাকলে।
৫. প্রসবের সময় যদি জরায়ুর নিচের দিকে ছিঁড়ে যায়, বাচ্চার মাথা যদি প্রসবপথে আটকে থাকে বা প্রসবব্যথা যদি দীর্ঘস্থায়ী (১২ থেকে ১৬ ঘণ্টার বেশি) হয়, তাহলে লিগামেন্ট ঢিলে হয়ে যায়।
৬. পরিণত বয়স, ৪৮ বছর বয়সের পর, অর্থাৎ ঋতু বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ইস্ট্রোজেন নামক হরমোন কমে যাওয়ার কারণে লিগামেন্টগুলো আপনাআপনি ঢিলে হয়ে যায়। এতে এমনিতেই জরায়ুর কিছুটা স্থানচ্যুতি ঘটে।
৭. লিগামেন্ট দুর্বল থাকলেও অনেক সময় তেমন অসুবিধা হয় না। তবে দীর্ঘদিনের কোষ্ঠকাঠিন্য, কাশি, পেটে বা জরায়ুতে টিউমার, সারভিক্সে পলিপ, প্রস্রাব আটকে গেলে প্রসূতি অবস্থায় বা প্রসবের পরে ভারী কাজ করলে, প্রসবের পরে সঠিক যত্ন না নিলে জরায়ু নিচে নেমে যেতে পারে।
৮. অপুষ্টিতে ভুগলেও লিগামেন্ট দুর্বল হতে পারে।
লক্ষণ
কোনো কোনো ক্ষেত্রে তেমন কোনো অসুবিধা হয় না।
১. অস্বস্তিকর অনুভূতি। ঋতুস্রাবের রাস্তায় কোনো কিছু বের হয়ে আসছে বা জায়গাটা ভরা ভরা মনে হবে।
২. দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় কোমরে ব্যথা হতে পারে।
৩. ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, প্রস্রাব অসম্পূর্ণ হওয়ার অনুভূতি, অনেক সময় অনবরত প্রস্রাব ঝরা, যদি স্ফিংটার ঢিলে হয়ে যায়।
৪. কোষ্ঠকাঠিন্য, পায়খানা অসম্পূর্ণ হওয়ার অনুভূতি।
৫. সাদাস্রাব, পুঁজমিশ্রিত বা লালচে স্রাব যেতে পারে।
চিকিৎসা
চিকিৎসার জন্য পরীক্ষা করে নির্ণয় করতে হবে জরায়ুর স্থানচ্যুতি কত ডিগ্রি, অর্থাৎ জরায়ু কোন অবস্থানে রয়েছে। অস্ত্রোপচার এর উপযুক্ত চিকিৎসা। তবে কোনো ডিগ্রি প্রলাপস, আদৌ সন্তানের প্রয়োজন আছে কি না ইত্যাদি বিবেচনা করে অস্ত্রোপচার করা হয়। অন্যথায় সামায়িকভাবে ‘রিং পেশারি’ পরিয়ে দেওয়া হয়। তাতে জটিলতা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
প্রতিরোধ
শিক্ষার অভাব, কুসংস্কারে জর্জরিত আমাদের দেশ, সমাজ তথা পরিবার এ ধরনের অসুবিধায় লজ্জার কারণে চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে পানি পড়া, ঝাড়ফুঁক, লতাপাতার ওষুধ ব্যবহার করে জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। অথচ একটু সচেতন হলেই এ দুর্ভোগ পোহাতে হয় না। জন্মগতভাবে লিগামেন্ট ঢিলে হলে প্রতিরোধ সম্ভব নয়। কিছু বিষয় খেয়াল করলে প্রতিরোধ করা যায়।
১. জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করে ঘন ঘন সন্তান প্রসব রোধ করা।
২. প্রসবব্যথা যেন দীর্ঘস্থায়ী না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৩. প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধাত্রী-নার্স দিয়ে প্রসব করাতে হবে।
৪. প্রসূতি অবস্থার বা প্রসবের পর ছয় মাস কোনো ভারী কাজ করা যাবে না।
৫. কোষ্ঠকাঠিন্য প্রস্রাব আটকে গেলে, টিউমার বা প্রসবের রাস্তায় অস্বস্তি বোধ করলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
৬. প্রসবের পর হালকা ব্যায়াম করতে হবে।