বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষির ওপর নির্ভর করে এদেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামো দাঁড়িয়ে রয়েছে।ভৌগোলিকভাবে নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ার কারণে এখানকার জমি অত্যন্ত উর্বর। পলিমিশ্রিত এঁটেল, এঁটেল-দোঁয়াশ মাটির কারণে এখানে যে কোনো ফসল ভালো হয়। অন্যদিকে বেশি ফসল ফলার প্রধান কারণ অসংখ্য নদী। তবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে এখানে ফসল উৎপাদনে নানা রকমের বিচ্ছেদ ঘটছে। প্রাকৃতিক সারের পরিবর্তে রাসায়নিক সার, সাধারণ কীটনাশকের পরিবর্তে বিদেশি কীটনাশক এমনকি বিদেশি সারও ব্যবহার করা হচ্ছে। অথচ একসময় কেবল প্রাকৃতিক সার ব্যবহার করে এদেশের কৃষক ফসল উৎপাদন করত। মানুষের চাহিদা বৃদ্ধির কারণে কৃষকে তার জমিতে অধিক ফসল উৎপাদন করতে হচ্ছে। আর এজন্য অধিক মাত্রায় সার ব্যবহার করতে হচ্ছে। অনেক সার ব্যবহারে কোনো নিয়মনীতি মানা হয় না। গাছের পুষ্টি, বংশবিস্তার, ফুল, ফলধারণ ও উৎপাদন বৃদ্ধিসহ মাটিকে সুস্থ এবং উর্বর রাখতে হলে সুষম ও পরিমিত উপায়ে সার ব্যবহার করতে হবে। কারণ অপরিমিত উপায়ে ও মাটি পরীক্ষা না করে সার ব্যবহার করলে উৎপাদন কম হয়। এতে কৃষকদের খরচের পরিমাণও বেড়ে যায়। ফসল উৎপাদনের জন্য এদেশের কৃষক মূলত নাইট্রোজেন, পটাশিয়াম, ইউরিয়া, ফসফেট জাতীয় সার ব্যবহার করেন। তবে সাশ্রয়ী পদ্ধতিতে সার ব্যবহার করতে হলে কৃষক বছরের কোন সময় ফসলের বীজ বপন করবে তা ঠিক করা জরুরি। জমি তৈরির আগে জমির উর্বরতা পরীক্ষা করতে হবে। কেননা, নাইট্রোজেন জাতীয় রাসায়নিক সার দ্রুত পানিতে মিশে যায়, এমনকি প্রায় ৭০ শতাংশ সার পানির সঙ্গে মিশে পরিবেশকে দূষিত করে। একইভাবে প্রায় ২০ শতাংশ ইউরিয়া অপচয় হয়। এসব অপচয় রোধ করতে কৃষককে অবশ্যই সার ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। রাসায়নিক সার কোনো বীজ, নতুন শিকড় ও লতাজাতীয় গাছের কাণ্ডের খুব কাছাকাছি বা কোনো ভিজা কচি পাতার ওপর ব্যবহার করা উচিত নয়। ঘনীভূত লবণ বিধায় এগুলো গাছের নাজুক সব বাড়ন্ত অংশকে পুড়িয়ে দিতে পারে। ধান, গম, পাট, সরিষা, ভুট্টা ফসলে ইউরিয়া সার ছিটিয়ে রাখলে অর্ধেকও গাছের কাজে লাগে না। ইউরিয়া সার বেশি দাঁড়ানো পানিতে দেওয়া ঠিক নয়। বোরো ধানের বেলায় ১ গ্রাম ওজনের ৩টি এবং রোপা আমনের ক্ষেত্রে ২টি গুটি ইউরিয়া পুঁততে হয়। চারা রোপণের ৫-৭ দিন পর দু'সারির কাছাকাছি চারা গোছার মাছখানে গুটি ইউরিয়া দিতে হবে। ফসফেট সার জমি তৈরি শেষ হওয়ার দুই-একদিন আগে দিতে হবে। জমি তৈরি শেষ হলে চাষে পটাশ, গন্ধক ও জিংকজাতীয় সার দিতে হবে। সুষম মাত্রায় নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম সার ব্যবহারের ওপর ফসল বিশেষভাবে নির্ভরশীল। এ জন্য সার প্রয়োগে নিয়ম মানলে কৃষক সহজে সাশ্রয়ী হতে পারে। তাহলে জমি পরীক্ষা করে নিলে তুলনামূলক কম সার ব্যবহারে অধিক ফসল উৎপাদন করা সম্ভব।