আবেগ মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি,অনুভূতিমূলক অভিজ্ঞতা। এর ফলে মানুষের মনের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি হয় যা মানুষের আচরণের দ্বারা প্রকাশ পায়। প্রেম-প্রীতি, ভালোবাসা, সুখ,আনন্দ প্রভৃতি ইতিবাচক আবেগ মানবীয় মূল্যবোধকে বিকশিত করে,মানুষকে সুখী করে। অপরদিকে ঈর্ষা, রাগ, বিষন্নতা, হতাশা ইত্যাদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। শিশু জন্মের পর থেকেই আবেগ প্রকাশ করতে পারে। অতি শৈশবকাল হচ্ছে আবেগীয় বয়স।জীবনের অন্য সময়ের চেয়ে অতি শৈশবে শিশু তীব্রভাবে আবেগ প্রকাশ করে। স্থান, কাল চিন্তা করার প্রয়োজন মনে করে না। কারণ শিশু এই সময় সামাজিক প্রত্যাশার বিষয়টি বোঝে না।বয়স বাড়ার সাথে সাথে শিশু বাইরের পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়তে শেখে। এর ফলে তার আবেগ প্রকাশের ধরন পরিবর্তন হয়। রাগ,ঈর্ষা, মারামারি, হৈচৈ করা এগুলোর দ্বারা শিশু তার আবেগ প্রকাশ করে। সুতরাং বলা যায়, মানুষের বিভিন্ন অনুভূতি আশ্রিত মানসিক অবস্থাই আবেগ। যেমন- শিশু মাকে কাছে না পেলে কাঁদে। এখানে মা হল ' উদ্দিপক' আর 'কান্না' হল আবেগ।
আবেগকে ইতিবাচক ও নেতিবাচক এই দুই ভাগে ভাগ করা যায়। ইতিবাচক আবেগ প্রীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করে। ইতিবাচক আবেগ হল- আনন্দ, উল্লাস, হাসি, সুখ, স্নেহ, ভালোবাসা ইত্যাদি। নেতিবাচক আবেগ অপ্রীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করে। যেমন- কান্না, রাগ, হিংসা, ক্ষোভ, ভয় ইত্যাদি। ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় আবেগ এর ক্ষেত্রে পরিবেশের প্রভাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আবেগের বিকাশ তিনটি বিষয় দ্বারা প্রভাবিত হয়। যেমন-
১. জন্মগতভাবে প্রাপ্ত মেজাজ: এটা বংশগতভাবে প্রাপ্ত জীন দ্বারা প্রভাবিত। কোন শিশু বেশি লাজুক, কেউ কম লাজুক। কোন শিশু বেশি বিরক্ত করে আবার কোন শিশু মার্জিত স্বভাবের হয়। ২. পরিবেশ: শিশু যে পরিবেশে বেড়ে ওঠে সে পরিবেশ শিশু আবেগ বিকাশে প্রভাব বিস্তার করে। যেমন- ক. বাড়ির পরিবেশঃ বাড়ির পরিবেশ শিশুর আবেগ বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পরিবারের স্নেহের বন্ধন শিশুর মধ্যে শক্তিশালী অনুভূতির বিকাশ ঘটায়। মায়ের সাথেই শিশুর প্রথম আবেগীয় বন্ধন সৃষ্টি হয়। নিচের অনুভূতিগুলো শিশুর আবেগকে শক্তিশালী করে। যেমন- শিশু মায়ের বুকের দুধ খাওয়ার সময় সৃষ্টি হয়। ঘনিষ্ঠভাবে মাতৃদুগ্ধ পানের ফলে শিশু মায়ের ঘ্রাণ অনুভব করতে পারে। মায়ের সাথে ঘনিষ্টতার ফলেই মায়ের কণ্ঠস্বর শুনলে শিশু উত্তেজিত হয়। শিশুর সাথে মায়ের দৃষ্টি বিনিময়ও গুরুত্বপূর্ণ।
খ. প্রশিক্ষণ: ব্যক্তিত্বের বিকাশ ও পরিবেশের সাথে অভিযোজন এর জন্য আবেগ নিয়ন্ত্রণ করার প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। বড়দের আবেগ প্রকাশের ধরন অনুকরণ করে। তাই বড়দের উচিত শিশুর সামনে অমার্জিতভাবে আবেগ প্রকাশ না করা।
৩. হেলদি কন্ডিশন: সুস্থ ও রুগ্ন শিশুর আবেগ অনুভূতির মধ্যে পার্থক্য থাকে। শিশুর দীর্ঘ দিন অসুস্থতা, অপুষ্টি বা প্রতিবন্ধিতা আবেগের বিকাশকে প্রভাবিত করে। শিশুর মধ্যে নেতিবাচক অনুভূতির বিকাশ ঘটায়।
শিশুকালের আবেগের সুষ্ঠু পরিচালনায় আমাদের করণীয়: ১. শিশুকে হ্যাঁ বলা ২. অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করা ৩. স্নেহ ভালোবাসা প্রদান। ৪. শিশুর ক্ষতিকর আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা ৫. শিশুকে আবেগ নিয়ন্ত্রনের উপায় শিক্ষা দেয়া ৬. পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করা ৭. শিশুকে সময় দেয়া ৮. নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনে শিশুকে অভ্যস্থ করা ৯. অসুস্থ শিশুকে নিরাপত্তা দেয়া ১০. শিশুর চাহিদা, জানার আগ্রহ ও কৌতুহলের পরিতৃপ্তি ঘটানো। উপরোক্ত বিষয়গুলো মেনে চললে শিশুর আবেগ বিকাশে সহায়ক হবে এবং শিশু ভবিষ্যৎ জীবনে সফল মানুষ হতে পারবে।