নিরাপদ সড়কের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে তা ভিন্ন খাতে নিতে কয়েক দিন ধরেই দেশে নানা ধরনের গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব ও ব্লগে বিভিন্ন উস্কানিমূলক পোস্ট, লেখা, লাইভ ভিডিও এর মাধ্যমে উস্কানি ও গুজব ছড়ানো হয়। অনেকেই গুজব না বুঝে তা শেয়ার করেন, এতে দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এ পরিস্থিতি প্রতিহত করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মতামত প্রকাশে শিক্ষক-কর্মচারীদের ওপর অনেকটা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে দুটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়। অন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে সতর্কতামূলক নোটিশ দিয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এক অফিস আদেশে শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা, নার্স ও কর্মচারীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া মতামত দেয়ার ওপর নির্দেশনা দেয়া হয়। নির্দেশ অমান্য করলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহ এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এ ধরনের একটি নির্দেশনা দেয়া হয়। শিক্ষক-কর্মচারীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে সতর্ক করেছে মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
বিএসএমএমইউ’র অফিস আদেশে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষতা ও শৃঙ্খলা অধ্যাদেশ এর ধারা ৫ (ঙ) এর আলোকে কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি ব্যতীত কোনো প্রচার মাধ্যম বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো বক্তব্য, বিবৃতি, স্ট্যাটাস প্রদান করা বিদ্যমান আইনের পরিপন্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা, নার্স ও কর্মচারী উক্ত আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে কোনো প্রচার মাধ্যম বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি ব্যতীত কোনো বক্তব্য, বিবৃতি, স্ট্যাটাস প্রদান করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার এখতিয়ার কর্তৃপক্ষ সংরক্ষণ করে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাষ্ট্রবিরোধী, জাতীয় ঐক্য ও চেতনার পরিপন্থী, রাজনৈতিক মতার্দশ বা আলোচনা সংশ্লিষ্ট, কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রকে হেয় প্রতিপন্ন করা, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা, সর্বোপরি জনমনে বিভ্রান্তি, অসন্তোষ বা অপ্রীতিকর মনোভাব সৃষ্টি করতে পারে এমন কোনো বিষয় প্রচার এবং কমেন্ট করা সরকারি আইনের পরিপন্থী। এ ব্যাপারে সকলকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার জন্য আহ্বান জানানো হলো।
আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের গুজব ও প্রচারণার কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নজরদারি শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ইতিমধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে ১৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গুজব ছড়িয়ে উস্কানিদাতাদের গ্রেফতারে এখনও অভিযান চলছে। এছাড়া শতাধিক ফেসবুক আইডি চিহ্নিত করে তা বন্ধের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার নিরাপত্তা ও অপরাধ দমন বিভাগের উপ-কমিশনার মো. আলিমুজ্জামান বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এক শ্রেণির লোক উস্কানিমূলক পোস্ট ও মিথ্যা তথ্য প্রচার শুরু করেছিল। এতে করে জনমনে আতঙ্ক ও দেশ অস্থিতিশীল হতে পারত। তাই বিভিন্ন সময় এসব অপরাধে জড়িত থাকার অপরাধে আমরা নয়জনকে গ্রেফতার করেছি। রিমান্ডে এনে অনেক আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে, গুজব ঠেকাতে শতাধিক ফেসবুক আইডি ও কন্টেন্ট বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুরোধে তারা এ উদ্যোগ নিচ্ছে। এর মধ্যে ফেসবুকের আইডি সরাসরি বন্ধ করার সুযোগ নেই বিটিআরসির। তারা আইডি চিহ্নিত করে ফেসবুককে কেবল অনুরোধ জানাতে পারে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ নিজস্ব বিবেচনায় ওইসব আইডি বন্ধ করতে পারে আবার নাও পারে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের কিছুই করার নেই। তবে কিছু কনটেন্ট ব্লক করার সুযোগ রয়েছে বিটিআরসির। গত কয়েক দিনের ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ে রীতিমতো বিপাকে পড়েছে বিটিআরসি।
তারা জানায়, এরই মধ্যে বেশ কিছু সাইট নিয়ে অনুরোধ এসেছে। প্রক্রিয়া মেনে বিটিআরসি সেসব নিয়ে কাজ করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক কর্মকর্তা জানান, গত কয়েক দিন ধরে আমাদের কাছে অনবরত নির্দেশনা আসছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় এ ধরনের নির্দেশনা বলে দাবি করছে সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে বিটিআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জহুরুল হক বলেন, সাম্প্রতিক ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে উস্কানিমূলক অনেক কিছু রটানো হয়েছে। গুজব ছড়িয়ে সহিংসতামূলক কর্মকাণ্ডও হয়েছে। এসব অনাকাঙ্ক্ষিত। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনসচেতনতামূলক কিছু নির্দেশনা আসে সেসব আমরা প্রচার করেছি। বিভিন্ন অপারেটরদের জানিয়েছি। আর রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কিছু হলে মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের লিখিত অনুরোধ জানানো হয়। তখন আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।
সম্প্রতি ফেসবুক বা কোনো কন্টেন্ট বন্ধ করা হয়েছে কি না প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা ফেসবুককে কেবল অনুরোধ করতে পারি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে আমরা সেটা নিয়মিত করি। কোনো কন্টেন্ট বন্ধ করা হয়েছে কি না আমার জানা নেই। বর্তমানে বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারী রয়েছেন প্রায় ৪ কোটি। আর ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৮ কোটির বেশি। সূত্র : মানবজমিন।