উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় ও বিশেষায়িত সরকারি হাসপাতালে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা পাবেন মুক্তিযোদ্ধারা। এ জন্য হাসপাতালগুলোকে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা অগ্রিম দেবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
মুক্তিযোদ্ধাদের সব পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা সুবিধা দিতে রোববার স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মধ্যে একটি সমঝোতাস্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব সিরাজুল হক খান ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এতে স্বাক্ষর করেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
এ সময় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক উপস্থিত ছিলেন।
আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য আমরা প্রাথমিকভাবে ১৪টি বিশেষায়িত হাসপাতালকে ১৫ লাখ টাকা করে অগ্রিম দিয়ে রাখব। এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা অনুযায়ী উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় হাসপাতালগুলোকে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা করে দেব। আগামীকালের (সোমবার) মধ্যেই এই টাকা ছাড় দিয়ে দেব, তাদের কাছে চলে যাবে। একজন মুক্তিযোদ্ধা ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা সহযোগিতা পাবেন।’
বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোর মধ্যে রয়েছে- ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর), জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসাইন্সেস হাসপাতাল, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল, গোপালগঞ্জের শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘বরাদ্দ দেয়া অর্থের আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তা হবেন উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, জেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালে সিভিল সার্জন, সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিচালক বা তার ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধি, বিশেষায়িত হাসপাতালে হাসপাতালের প্রধান বা তার ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধি।’
‘ওনারা টাকা উঠাবেন, ব্যয় করবেন এবং হিসাব রাখবেন, এটা অডিট হবে। এটা রিভলভিং ফান্ডের মতো, খরচ করার পর তিনি চাহিদা দেবেন। দেয়া টাকার ৭৫ শতাংশ খরচের পর তারা আবার টাকা চাইবেন, যাতে কোনো সমস্যায় পড়তে না হয়। চাওয়া মাত্রই ওনারা পাবেন।’
মোজাম্মেল হক বলেন, ‘এই স্বাস্থ্যমন্ত্রী আসার পর তিনি প্রথম ঘোষণা দিয়েছিলেন কিছু বেড (হাসপাতালের সিট) মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য রিজার্ভ থাকবে। চিকিৎসা পাবেন কিন্তু এতে প্রয়োজন মিটছিল না, তাই আমরা এটকে আরও সম্প্রসারিত করে যাতে শতভাগ সেবা নিশ্চিত করতে পারি, সেজন্য আমরা আজকে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করছি।’
তিনি বলেন, ‘ওষুধপত্র, বিভিন্ন টেস্ট, হাসপাতালের সিট ভাড়া বলেন, সেগুলো যা যা আছে বিনামূল্যে দেয়া হবে। একজন মুক্তিযোদ্ধাকে তার পকেট থেকে কোনো অর্থই ব্যয় করতে হবে না।’
‘আমাদের অনেক স্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা বলেছেন, আপনারা একটা তহবিল করেন, আমরা কিছু ফান্ড দেব। আমরা সেটাও চিন্তা করছি। সেখানে আমরা চিকিৎসার লিমিটটা ৫০ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ টাকা করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি। এই মুহূর্তে নীতিমালায় ৫০ হাজার টাকা রয়েছে। আমরা সেটা ২ লাখ টাকায় উন্নীত করব খুব দ্রুতই।’
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে যারা জীবন বাজি রেখে দেশকে স্বাধীন করেছেন, তাদের প্রকৃত সম্মান, রাষ্ট্রের কাছ থেকে যেসব ন্যায্য পাওয়া রয়েছে তা যেন নিশ্চিত করতে পারি। এরই একটি অংশ চিকিৎসা।’
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে অনেক মুক্তিযোদ্ধা নানারকম অসুখে আক্রান্ত। মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এই দায়িত্ব আমরা পালন করছি। আমি কথা দিচ্ছি, আমরা এটি সম্পাদন করার জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করে যাব, ইনশাআল্লাহ। অবশ্যই করব। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হাজার হাজার চিকিৎসক নার্স আন্তরিকভাবে এই কাজটি করলে তারা অবশ্যই বাংলাদেশের জনগণের দোয়া পাবেন, ভালবাসা পাবেন।’
বর্তমানে জীবিত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা এক লাখের কিছু বেশি জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সচিব বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের সকলেই এখন প্রায় ষাটোর্ধ্ব, জীবন সায়াহ্নে তারা উপস্থিত। বাধ্যর্ক্যের কারণে তারা নানা জটিল রোগে ভুগছেন।’
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শেখ মিজানুর রহমান বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা পরামর্শ, শল্য চিকিৎসা, হাসপাতালের সরবরাহযোগ্য ওষুধ, বেড সরবরাহ, পথ্য এবং নার্সিং ইত্যাদি সেবা দেয়া হবে। এই চিকিৎসার অর্থ দেয়া হবে হাট-বাজারের ইজারার আয়ের ৪ শতাংশ থেকে। স্থানীয় সরকার বিভাগের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এই ৪ শতাংশ অর্থ পেয়ে থাকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোত্তম চিকিৎসা হচ্ছে কি না, বরাদ্দ দেয়া অর্থ সঠিকভাবে ব্যয় করা হচ্ছে কি না- তা দেখভালের জন্য উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে, জেলা পর্যায়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (সার্বিক) নেতৃত্বে, বিভাগীয় পর্যায়ে (ঢাকা মহানগর বাদে) অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে এবং ঢাকা মহানগরীতে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের একজন যুগ্ম-সচিবের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হবে।’