ভারতের বিহার রাজ্যের একটি শহর মুজাফফরপুর। সস্তায় কাপড় ও গয়না পাওয়া যায় এই শহরে। চুপিসারে চলে নানা অপরাধও।
মুজাফফরপুর ভারতের দরিদ্র এলাকাগুলোর একটি। ৪৬ শতাংশ বাসিন্দার বয়স ১৭ বছরের নিচে। তাদের বেশির ভাগই অনাথ। শিশু পাচারের ঘটনাও এখানে বেশি।
বিবিসির খবরে জানা যায়, গত ৩০ মে বিকেলে এই শহরেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত একটি বাড়ির খোঁজ পায়। বাড়িটিতে কোনো জানালা ছিল না। সেখানে ৪৪ জন মেয়েকে রাখা হয়েছিল। তাদের বয়স ছিল ৭ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। ওই বাড়ি থেকে মেয়েদের উদ্ধার করে নিয়ে যায় পুলিশ।বিহারের আশ্রয় সংস্থাগুলোর বিষয়ে গত মার্চ মাসে পুলিশ প্রতিবেদন পায়। ভারতের শীর্ষ সামাজিক বিজ্ঞান স্কুল টাটা ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সের উদ্যোগে বানানো ১০০ পাতার ওই প্রতিবেদনে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা অনাথ শিশুদের অবস্থার বিবরণ ছিল।
মুম্বাইভিত্তিক স্কুলটির সাতজন গবেষক ৩৮টি জেলায় ছয় মাস ধরে ১১০টি আশ্রয়কেন্দ্রে অভিযান চালায়। সেখানে মুজাফফরপুরে স্থানীয় সংবাদপত্র মালিক ব্রজেশ ঠাকুরের একটি আশ্রয়কেন্দ্রের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। ওই আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মেয়েরা বাইরে যেত না। কেন্দ্রের সাতজন মেয়ে যৌন নির্যাতন ও সহিংসতার শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ করে।
পুলিশের কাছে জিজ্ঞাসাবাদে ভয়ংকর সব তথ্য দেয় আশ্রয়কেন্দ্রের মেয়েরা। আশ্রয়কেন্দ্রের মেয়েদের আচরণও কিছুটা অদ্ভুত ছিল। তাদের অনেকে কখনো কাঁদছিল। আবার কখনো হাসছিল। তাদের মধ্যে ১৪ জনকে মানসিকভাবে খুবই অবসাদগ্রস্ত মনে হয়।
মেয়েদের মধ্যে অনেকেই যক্ষ্মা রোগে এবং ত্বকের সংক্রমণে ভুগছিল। অনেকে পেনসিল কাটারসহ বিভিন্ন জিনিস দিয়ে নিজেকে আঘাত করেছিল।
জয়তী কুমার নামের একজন গবেষক জানান, একজন মেয়ের শরীরে ২০ থেকে ২৫টি আঘাতের চিহ্নও দেখা গেছে।
এক মেয়ে জানায় আরও ভয়ংকর তথ্য। তাদের খাবারে ঘুমের ওষুধ মেশানো হতো। সেগুলো খেয়ে তারা খুব দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ত। ঠাকুরের সহায়তায় বাইরে থেকে কিছু মানুষ আসত। তারা ঘরে ঢুকে মেয়েদের ধর্ষণ করত।
ওষুধ মেশানো খাবার খেয়ে মেয়েরা অচেতন হয়ে পড়ত। দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ত। সকালে তারা নিজেদের অর্ধনগ্ন অবস্থায় পেত। শরীরে অস্বস্তি ও ব্যথা অনুভব করত। সে সময় আশ্রয়কেন্দ্রের পরিচর্যাকারী অন্য নারীরা নিজেদের মধ্যে ফিসফিস করে কথা বলতেন।
চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানান, ৪২ জন মেয়ের মধ্যে ৩৪ জন যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
পুলিশ ঠাকুরসহ অন্য নয়জনকে আটক করেছে। ঠাকুরসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, যৌন নির্যাতন ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়েছে। প্রধান সন্দেহভাজন ঠাকুর অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলছেন তিনি।
ভারতের অন্য আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতেও অবস্থা করুণ। সেখানে থাকা শিশুরা জানায়, তাদের নিয়মিত পেটানো হয়। অনেকে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। অনেক মেয়েরা অভিযোগ করেছে, তাদের কাপড় ও ওষুধ দেওয়া হয় না। মেঝেতে ঘুমাতে দেওয়া হয়। অনেক আশ্রয়কেন্দ্রে জোর করে শিশুদের দিয়ে রান্না করানো হয়। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে পালাতে চাইলে অনেককে মারধর করা হয়।
বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় সংস্কার আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছেন। ব্যক্তিমালিকানাধীন বা বেসরকারিভাবে পরিচালিত আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর নিয়ন্ত্রণ সরকার নেবে বলেও জানান তিনি।