আর ক’দিন পরেই পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। ঈদকে সামনে রেখে অস্থায়ী হাটে কোরবানির পশু উঠতে শুরু করেছে। এবার ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ২৩টি পশুর হাট বসছে। ঘুরে দেখা গেছে, হাটে প্রচুর পশু উঠলেও ক্রেতা অনেক কম। ফলে পর্যাপ্ত পশু থাকলেও জমছে না বিক্রি। তাই চিন্তিত বিক্রেতারা। তবে হাট কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগামী রবি, সোম ও মঙ্গলবারই মূল বেচা-বিক্রি হবে। যদিও এবারের কোরবানির বাজারকে ‘জটিল’ বলছেন হাট ইজারাদাররা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এবারের ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৭টি পশুর হাট বসানোর অনুমোদন দিয়েছে। এছাড়া এই সিটি এলাকায় আরও ৬টি পশুর হাট বসছে, যদিও এসব হাটের ইজারা দেওয়া হয়নি। অনুমোদিত ও অনুমোদিত মিলিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় মোট ১৩টি পশুর হাট বসেছে। অপরদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এবার গাবতলী স্থায়ী পশুর হাটসহ মোট ১০টি পশুর হাট বসানোর অনুমোদন দিয়েছে।
রাজধানীর পশুর হাটগুলো ঘুরে দেখা গেছে, দেশি জাতের গরুর পাশাপাশি উঠেছে বিদেশি জাতের গরুও। ব্যবসায়ীরা গরুকে সাজিয়ে মালা পরিয়ে হাটে তুলেছেন। কেউ কেউ গরুর নামও দিয়েছেন। বিশাল দেহের এসব গরুর দামও হাঁকাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এখন পর্যন্ত গরুর আশানুরূপ বিক্রি শুরু হয়নি।
গতকাল শুক্রবার আফতাবনগরের পশুর হাটে দেখা যায়, ছোট-বড়-মাঝারি আকারের অনেক গরু। চুয়াডাঙ্গা থেকে গরু নিয়ে এসেছেন নাজমুল হাসান নান্নু। তার খামারে পালিত বিশাল আকৃতির গরুর নাম দিয়েছেন ‘খোকা বাবু’। খোকা বাবু দেখতে যেমন, ওজনেও তেমন। মালিক এই গরুর দাম হেঁকেছেন ১২ লাখ টাকা। কত টাকা হলে বিক্রি করবেন জানতে চাইলে নান্নু বলেন, আসলে এটা বলা খুব কঠিন। এখনো বাজার জমে উঠেনি। তাই বুঝা যাচ্ছে না বাজারের অবস্থা।
আফতাবনগর পশুর হাটের দায়িত্বে নিয়োজিত সাইদুর রহমান তপন ইত্তেফাক’কে বলেন, এবারের কোরবানির বাজার খুব জটিল মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, মহাসড়কে যানজটের কারণে ঢাকায় গরু প্রবেশ করতে পারছে না। তবে হাটে গরুর যা আসছে, বিক্রি সন্তোষজনক না।
রাজধানীর শনির আখড়া পশুর হাটে ময়মনসিংহ থেকে ১৩টি গরু নিয়ে এসেছেন সাইফুল সুজন। তিনি বলেন, হাটে গরু অনেক কিন্তু ক্রেতা সেই তুলনায় অনেক কম। যারা হাটে আসছেন, তারা দর-দাম দেখে যাচ্ছেন।
রাজধানীর সবচেয়ে পশুর বড় হাট গাবতলীতে গিয়ে দেখা গেছে, পর্যাপ্ত পশু উঠেছে। সেই তুলনায় ক্রেতা কম।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, ইজারা দেওয়া ৭টি হাট হচ্ছে, মেরাদিয়া বাজার সংলগ্ন খালি জায়গা, উত্তর শাজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী সংঘের মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, জিগাতলার হাজারীবাগ মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, কামরাঙ্গীরচর ইসলাম চেয়ারম্যানের বাড়ির মোড় থেকে দক্ষিণ দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর বাঁধসংলগ্ন খালি জায়গা, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন খালি জায়গা ও শ্যামপুর বালুর মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা। আর ইজারা ব্যতীত দক্ষিণ সিটি এলাকায় ৬টি পশুর হাট বসেছে। সেগুলো হচ্ছে-৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সামসাবাদ মাঠ সংলগ্ন সিটি করপোরেশনের খালি জায়গা, কমলাপুর লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাব সংলগ্ন বালুর মাঠ ও কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের খালি জায়গা, শনির আখড়া ও দনিয়া মাঠ সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ধূপখোলা মাঠ সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউয়ার টেক মাঠ সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, গোলাপবাগ মাঠ সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, দাওকান্দি ইন্দুলিয়া ভাগ্যপুর নগর (মেরাদিয়া মৌজা) লোহারপুলের পূর্ব অংশ ও খোলা মাঠ সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা এবং ডেমরা আমুলিয়া মডেল টাউন ও আশপাশের খালি জায়গা।
এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় গাবতলী স্থায়ী পশুর হাট ছাড়াও অস্থায়ী নয়টি হাট বসানো হয়েছে। হাটগুলো হচ্ছে, উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের ২ নম্বর ব্রিজের পশ্চিমে গোলচত্বর পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশের ফাঁকা জায়গা, মিরপুর ডিওএইচএসের উত্তর পাশের সেতু প্রপার্টি সংলগ্ন খালি জায়গা, মিরপুর সেকশন-২ (ইস্টার্ন হাউজিং)-এর খালি জায়গা, মোহাম্মদপুর বুদ্ধিজীবী সড়ক সংলগ্ন (বছিলা) পুলিশ লাইনের খালি জায়গা, খিলক্ষেত বনরূপা আবাসিক প্রকল্পের খালি জায়গা, ৩০০ ফুট রাস্তার পাশে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার খালি জায়গা, ভাটারা (সাঈদনগর) হাট, তেজগাঁও শিল্প এলাকার পলিটেকনিক্যাল কলেজ মাঠ ও উত্তরখান হাট।