বন্ধুর স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া নিয়ে বিরোধ ও ব্যাংকে থাকা টাকা হাতিয়ে নিতেই পরিকল্পিতভাবে পিটিয়ে ও গলা কেটে সান্তাহার আলী ওরফে শান্ত শেখকে (২৬) হত্যা করে তারই পাঁচ বন্ধু ও এক বন্ধুর শ্যালক। হত্যার আগে ইস্ত্রি দিয়ে বুক ও নাভিতে ছ্যাঁকা দেয় তারা।
শান্তকে সবাই মিলে ধরে রাখে আর ধারালো ছুরি দিয়ে তাকে জবাই করে এশারত। শনিবার এ ঘটনায় আটক জসীম উদ্দিন, আবদুল মতিন ও নয়ন নাটোর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. খোরশেদ আলমের কাছে এ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
বড়াইগ্রাম থানার ওসি (তদন্ত) ইন্সপেক্টর সৈকত হোসেন ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মামুন বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করেছেন। নিহত শান্ত জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার গড়মাটি গ্রামের মামুদ আলী শেখ জামালের ছেলে।
জবানবন্দি সূত্রে জানা গেছে, গড়মাটি গ্রামের শান্তর ঘনিষ্ঠ বন্ধু একই গ্রামের নয়ন, রুবেল, মিঠুন, জসীম ও এশারত। কিছুদিন ধরে এশারত তার স্ত্রী মমতাজ বেগমের সঙ্গে শান্তর পরকীয়া সম্পর্ক রয়েছে বলে সন্দেহ করে আসছিল।
এরই জেরে এশারত প্রতিশোধ নিতে গোপনে শান্তকে হত্যা ও ব্যাংকে থাকা তার তামাক বিক্রির ৯৮ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য বন্ধুদের সঙ্গে পরিকল্পনা করে। সে অনুযায়ী, নয়ন শান্তকে ব্যবসায় লগ্নি করার জন্য ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে বলে। পরামর্শ অনুযায়ী, ২৪ মে শান্ত সোনালী ব্যাংক বড়াইগ্রাম (বনপাড়া) শাখা থেকে ৮০ হাজার টাকা উঠিয়ে রাতে নয়নের সঙ্গে টাকা নিয়ে এশারতের বাড়িতে যায়।
সেখানে এশরাত ছাড়াও নয়ন, রুবেল, মিঠুন, জসীমসহ এশারতের শ্যালক ধানাইদহ গ্রামের আবদুল মতিন উপস্থিত ছিল। একটি ফাঁকা ঘরে নিয়ে শান্তর কাছে থাকা টাকা কেড়ে নিয়ে আকস্মিক গামছা দিয়ে মুখ বেঁধে সবাই মিলে এলোপাতাড়ি পেটায়। এ সময় গরম ইস্ত্রি দিয়ে শান্তর বুক ও নাভিতে ছ্যাঁকা দেয় তারা। ঘটনার সময় পাশের ঘরে ঘুমিয়ে থাকা স্ত্রী মমতাজ বেগম জেগে উঠলে এশারত ঘরের বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে তাকে আটকে রাখে।
পরে বাড়ির পেছনের ডোবার পাশে নিয়ে শান্তকে সবাই মিলে ধরে রাখে আর এশারত ধারালো ছুরি দিয়ে তাকে জবাই করে। এরপর বড় পলিথিনের বস্তায় লাশটি ভরে তামাকের জমিতে ফেলে রেখে আসে। ঘটনার দু’দিন পর রাখালেরা বিলে মহিষ চড়াতে গিয়ে সেখানে লাশটি পড়ে থাকতে দেখে।
হত্যার আগে শান্তর চুরি যাওয়া একটি চেকের পাতায় জোর করে স্বাক্ষর নেয় তারা। লাশ উদ্ধারের পরদিন রোববার পাবনার ফরিদপুর শাখা সোনালী ব্যাংক থেকে অনলাইনের মাধ্যমে আরও ১৫ হাজার টাকা তুলে নেয় তারা। শান্ত হত্যার ঘটনায় নিহতের ভাই পাষাণ বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের নামে থানায় মামলা করেন।
বড়াইগ্রাম সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদসহ ওসি তদন্ত সৈকত হোসেনের সহযোগিতায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মামুন মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের পাশাপাশি তদন্তের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডে জড়িত এশারতসহ পাঁচজনকে আটক করেন। এ ঘটনার একমাত্র পলাতক আসামি মিঠুনকেও আটকের চেষ্টা চলছে।