রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ডিজিটাল নিরাপত্তা বিলসহ জাতীয় সংসদে পাস হওয়া সাতটি আইনে সম্মতি স্বাক্ষর দিয়েছেন। ফলে এসব আইন কার্যকর হতে আর কোন বাধা রইল না। রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর কোন বিল আইন হিসেবে গণ্য হয়। এখন এটি গেজেট আকারে প্রকাশ করবে সরকার। সম্পাদক পরিষদ, সাংবাদিক ও বিভিন্ন মহলের আপত্তি ও উদ্বেগ উপেক্ষা করেই ডিজিটাল নিরাপত্তা বিলে সম্মতি দেন রাষ্ট্রপতি।
সংসদ সচিবালয় আজ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, মহামান্য রাষ্ট্রপতি দশম জাতীয় সংসদের ২২তম অধিবেশনে জাতীয় সংসদ কর্তৃক গৃহীত সাতটি বিলে সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। এরমধ্যে রয়েছে বহুল আলোচিত, ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল ২০১৮, সড়ক পরিবহন বিল ২০১৮, ‘আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি’য়া আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ এর অধীন কওমি মাদরাসা সমূহের দাওরায়ে হাদিস (তাকমীল) এর সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) এর সমমান প্রদান বিল ২০১৮, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বিল ২০১৮, পণ্য উৎপাদনশীল রাষ্ট্রায়ত্ত্ব শিল্প প্রতিষ্ঠান শ্রমিক (চাকরির শর্তাবলী) বিল ২০১৮, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট বিল,২০১৮ ও কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট বিল ২০১৮।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর সংসদে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হয়। সম্পাদক পরিষদ ওই আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩ ধারা নিয়ে আপত্তি জানায়। পাশাপাশি বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাও এই আইন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। আইনের এসব ধারায় বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতারসহ পুলিশকে দায় মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আইনের ধারায় অফিশিয়াল সিক্রেসি এ্যাক্ট যুক্ত করায় ‘বাক স্বাধীনতা এবং সাংবাদিকদের স্বাধীনতা’ হুমকির মুখে পড়বে বলে তারা আশঙ্কা ব্যক্ত করেন ।
এ বিষয়ে সরকারের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার গত ৩০ সেপ্টেম্বর বৈঠক করেন। বৈঠকে সম্পাদকরা এই আইন সংশোধেনর দাবি জানান। এসময় আইনটির আপত্তিকৃত ধারাগুলি নিয়ে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে আলোচনার আশ্বাস দেন। আইনটি সংসদে পাসের আগেও সংসদীয় কমিটির বৈঠকে অংশ নিয়ে সাংবাদিক ও সম্পাদক পরিষদের নেতরা সুনির্দিষ্ট ৮টি ধারায় আপত্তি করে তা সংশোধনের সুপারিশ করে। তবে তা আমলে নেওয়া হয়নি।
এ আইনের ৩২ ধারা বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ‘অফিশিয়াল সিক্রেট অ্যাক্ট-১৯২৩ এর আওতাভুক্ত কোনো অপরাধ কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো ডিজিটাল মাধ্যমে সংঘটন করে বা করতে সহায়তা করেন, তা হলে তিনি সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদন্ড বা ২৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডত হবেন। এ আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধের জন্য বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেফতারে পুলিশকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।