প্রতীকি ছবি
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের আল নুর মসজিদ এবং লিনউড মসজিদে গত ১৫ মার্চ এক শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদীর গুলিতে নিহত হন ৫০ জন মানুষ। এ সময় আহত হন ৪২ জন। মসজিদে চালানো তাণ্ডব ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করেছিল হামলাকারী।
এ ঘটনায় বিশ্বজুড়ে ওঠা নিন্দা আর প্রতিবাদের মুখে এবার ফেসবুক জানিয়েছে, আগামী সপ্তাহ থেকে শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদের ‘স্তুতি বা প্রশংসা, সমর্থন এবং প্রতিনিধিত্বমূলক’ কোন ধরনের পোষ্টই আর এ মাধ্যমে শেয়ার করা যাবে না।
বুধবার (২৭ মার্চ) এক ব্লগ পোষ্ট দিয়ে ফেসবুক জানিয়েছে, সুশীল সমাজ এবং একাডেমিকদের সঙ্গে তিন মাস আলোচনার পর সংস্থাটি বুঝতে পেরেছে শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদকে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদ ও সংগঠিত ‘হেট ক্রাইমে’র থেকে আলাদা করা যাবে না।
এছাড়া যেকোন জঙ্গি মতাদর্শ প্রচারে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি চিহ্নিত এবং ব্লক করার ক্ষেত্রে নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয় ও বহুল ব্যবহৃত এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কর্তাব্যক্তিরা।
এ ধরনের বিষয় ফেসবুকে যারা সার্চ করবেন তাদের তথ্য সরাসরি উগ্র জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে এমন সংস্থার কাছে পাঠানো হবে।
এর আগে ফেসবুক শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীদের কিছু কর্মকাণ্ড, যেসব জিনিসপত্রকে তারা বর্ণবাদী বলে মনে করেনি, তা চালানোর অনুমতি দিয়েছিল। এর মধ্যে শ্বেতাঙ্গদের জন্য আলাদা জাতিরাষ্ট্রের দাবি সম্বলিত প্রচারণাও ছিল।
এক বিবৃতিতে ফেসবুক জানায়, শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর মানুষ তাদের জাতিগত বা নৃতাত্ত্বিক ঐতিহ্য ফেসবুকে পোস্ট করতে পারবেন। তবে শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদ বা শ্বেতাঙ্গ বিচ্ছিন্নতাবাদের পক্ষে কোনও পোস্ট বরদাশত করা হবে না।
বিদ্বেষমূলক উপাদান হিসেবে আগে থেকেই প্ল্যাটফর্মটিতে শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদ নিষিদ্ধ। তবে শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদ বা শ্বেতাঙ্গ বিচ্ছিন্নতাবাদকে এতোদিন ধরে সুস্পষ্ট বর্ণবাদ হিসেবে বিবেচনা করা হতো না। তবে এখন নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এগুলোও নিষিদ্ধের তালিকায় পড়বে।
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের ঘটনার পর ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে জঙ্গি মতাদর্শ প্রচারের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে যাতে ব্যবহার না করা হয়, সেজন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ব নেতাদের অনেকেই।
নিউজিল্যান্ডের ঘটনায় সামাজিক মাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আর্ডান বলেছেন, এক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছিল ‘প্রকাশক, শুধু পোষ্টম্যান বা বার্তাবাহক না।’
এর আগে ফেসবুক জানিয়েছিল, মসজিদে হামলার ঘটনার ভিডিওটি মুছে ফেলার আগে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১২ লাখ ভিডিও ব্লক করেছে এবং তিন লক্ষ ভিডিও ডিলিট করেছে তারা। কিন্তু তার আগেই অন্য যেকোন ভিডিওর চেয়ে চার হাজার গুণ বেশি মানুষ সেটি দেখেছে।
ফেসবুকের সঙ্গে এখন অন্যান্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানও এমন সহিংস জিনিস সম্প্রচার বন্ধের ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে। সূত্র: বিবিসি