বছরে দুই ঈদ এবং পহেলা বৈশাখ এ তিনটি উৎসবই বাংলাদেশের মানুষের কাছে সবচেয়ে বড় উৎসব। এগুলোকে কেন্দ্র করেই নির্ধারণ হয় বাংলাদেশিদের আয়-ব্যয় ও আনন্দ বিনোদনের হিসাব-নিকাশ।
উৎসবে তাই প্রেক্ষাগৃহগুলোও সেজে ওঠে বড় বাজেটে নির্মিত ছবির নতুন নতুন পোস্টারে। এবারের ঈদুল ফিতর উপলক্ষে মুক্তি পেয়েছে পাঁচটি ছবি। মুক্তি পাওয়া এ ছবিগুলো কেমন ব্যবসা করল? কেমনই বা লাগল দর্শকদের কাছে? এ প্রশ্নের উত্তর নিয়েই লিখেছেন- অনিন্দ্য মামুন
সারা বছরই হলে দর্শক যেমনটিই থাকুক না কেন ঈদের মতো বড় উৎসবে এখনও ছবি দেখতে প্রেক্ষাগৃহে দর্শকরা ছুটে যান। প্রিয় তারকার অভিনীত ছবি দেখেন। শিস বাজান, হাততালি দেন। বরাবরের মতো এবারের ঈদেও হলগুলোতে দেখা গেছে এমন দৃশ্য।
ঈদের মাসখানেক আগে থেকেই রাজধানীর রাস্তার আশপাশের দেয়ালে সাঁটানো হয়েছিল বড় বড় পোস্টার। শহরের অলিগলিতেও ছিল একই অবস্থা। ফ্লাইওভারের বড় বড় পিলারও ঢেকেছিল নতুন ছবির বিশাল সাইজের পোস্টারে। একই অবস্থা ছিল রাজধানীর বাইরে দেশের অন্য শহরগুলোতেও।
ঈদে এবার মুক্তি পেয়েছে পাঁচটি ছবি। ছবিগুলো হচ্ছে- আশিকুর রহমান পরিচালিত ‘সুপার হিরো’, রায়হান রাফি পরিচালিত ‘পোড়ামন-টু’, উত্তম আকাশের ‘চিটাগাইঙ্গা পোয়া নোয়াখাইল্লা মাইয়া’, আবদুল মান্নানের ‘পাঙ্কু জামাই’ এবং নূর ইমরান মিঠুর ‘কমলা রকেট’। পাঁচটির মধ্যে তিনটি ছবিরই নায়ক শাকিব খান। এর মধ্যে ‘সুপার হিরো’ ও ‘চিটাগাইঙ্গা পোয়া নোয়াখাইল্লা মাইয়া’ ছবিতে শাকিব খানের বিপরীতে আছেন চিত্রনায়িকা বুবলী। আর ‘পাঙ্কু জামাই’ ছবিতে রয়েছেন অপু বিশ্বাস।
ঈদের দিন ১৩৩টি হলে মুক্তি পেয়েছে ‘চিটাগাইঙ্গা পোয়া নোয়াখাইল্লা মাইয়া’। ‘সুপার হিরো’ মুক্তি পেয়েছে ৮০ হলে। আর ‘পাঙ্কু জামাই’ মুক্তি পেয়েছে ৪০টি হলে। এ ছাড়া ‘পোড়ামন-টু’ ২২টি হলে ও কমলা রকেট মাত্র তিনটি হলে মুক্তি পায়। এই পাঁচটি ছবির মধ্যে ব্যবসায়িক দিক থেকে ‘সুপার হিরো’ ছবিটি এগিয়ে রয়েছে।
অন্যসব উৎসবের মতো এবারের ঈদেও নিজের সঙ্গেই শাকিব খানকে লড়াই করতে হয়েছে। তার মুক্তি পাওয়া তিন ছবির মধ্যে ব্যবসাসফল ছবি হচ্ছে ‘সুপার হিরো’।
ঈদের মাত্র দু’দিন আগে সেন্সর ছাড়পত্র পাওয়ার পর ছবিটির মুক্তি নিশ্চিত করা হয়। কোনো ধরনের প্রচার ছাড়াই ছবিটি হল পায় ৮০টি। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা ও শাকিব খানের সুপার হিরো লুকের জন্য দর্শকরা এ ছবির প্রতি আগ্রহী ছিলেন আগে থেকেই। মুক্তি পাওয়ার পর সে আগ্রহের প্রমাণও দিয়েছেন তারা।
রাজধানীতে খুব বেশি হলে মুক্তি না পেলেও ঢাকার বাইরের হলগুলোতে বাজিমাত করেছে ছবিটি। ব্যবসাও করেছে। ঈদের দ্বিতীয় সপ্তাহে তাই সিনেপ্লেক্সসহ নতুন তিনটি হল যুক্ত হয়। দ্বিতীয় সপ্তাহের আগ পর্যন্ত ঢাকার বাইরের মনিহার হলে দশ লাখ টাকা আয়ের কথা জানিয়েছেন হল কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে মধুমিতা হলে ঈদের সপ্তাহে ব্যবসা হয়েছে প্রায় ছয় লাখেরও বেশি। একজন বাংলাদেশি বিজ্ঞানীর গল্প নিয়ে এগিয়েছে সুপার হিরোর গল্প। থ্রিলার ও অ্যাকশন ঘরানার গল্প হওয়ায় দর্শকরাও ভিড়েছে সুপার হিরোর কাছে। তবে ব্যবসায়িকভাবে এগিয়ে থাকলেও এ ছবিতে ব্যবহৃত গ্রাফিক্স নিয়েও আপত্তি ছিল দর্শকদের। অনেকে বলেছেন, গ্রাফিক্সের কাজগুলো নিখুঁতভাবে করতে ব্যর্থ হয়েছেন নির্মাণ সংশ্লিষ্টরা।
অন্যদিকে সর্বাধিক হলে মুক্তি পেলেও খুব দর্শক টানতে পারেনি শাকিব-বুবলীর অন্য ছবি উত্তম আকাশ পরিচালিত ‘চিটাগাইঙ্গা পোয়া নোয়াখাইল্লা মাইয়া’। দুর্বল গল্প ও সময়োপযোগী নির্মাণ না হওয়ায় ছবিটি নিয়ে দর্শকদের মধ্যে আগ্রহ ছিল মিশ্র। শাকিবভক্তরা তবুও ছবিটি হলে গিয়ে দেখেছেন।
হতাশ হলেও শুধু প্রিয় নায়কের প্রতি সম্মান দেখিয়েই সিনেমা হলে গিয়েছেন তারা। তাদের মধ্যে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, এ ধরনের পরিচালকের ছবিতে অভিনয় না করলে কী শাকিবের খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে? তবুও ব্যবসায়িক দিক থেকে ছবিটি দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। এবং এটা শুধুই এ ছবিতে শাকিবের উপস্থিতির কারণে।
এবারের ঈদে আরও একটি আলোচিত ছবি মুক্তি পেয়েছে। সেটি হচ্ছে সিয়াম-পূজা অভিনীত ‘পোড়ামন-টু’। রায়হান রাফি পরিচালিত এ ছবিটি মাত্র বাইশটি হলে মুক্তি পায়। জুটি হিসেবে সিয়াম ও পূজা এ ছবিতে নাম কামিয়েছেন বেশ।
তবে ছবিটির প্রযোজনা সংস্থা দাবি করছে, এটি এবারের ঈদের সেরা ছবি। ব্যবসায়িক দিক থেকে নাকি এরই মধ্যে এক কোটি টাকার ঘরে পৌঁছে গিয়েছে। তবে এসব আলোচনা গুটিকতক মিডিয়া কর্মী এবং ছবির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে সোশ্যাল মাধ্যমে এ ধরনের কোনো আলোচনা এখনও সেভাবে শোনা যায়নি।
তবে ঈদের ছবির ব্যবসায়িক দিক থেকে তিন নাম্বারে অবস্থান করছে ‘পোড়ামন-টু’। ঈদের ছবিতে নতুন জুটি হিসেবে সিয়াম-পূজা দর্শক সমর্থন ভালোই পেয়েছেন।
অন্যদিকে শাকিব খানের আরেক ছবি ‘পাঙ্কু জামাই’ নিয়ে দর্শকদের আগ্রহ একেবারেই চোখে পড়েনি। রাজধানীর বাইরে ছবিটি যে ক’টি হলে মুক্তি পেয়েছে প্রত্যেকটি হল থেকে বের হয়ে দর্শকরা অভিযোগ করেছেন, অনেক পুরনো ছবি এটি। এমন গল্পে শাকিব খান কীভাবে কাজ করেছেন এটি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেক দর্শক।
এ ছাড়া শাকিব-অপুর বিচ্ছেদও প্রভাব ফেলেছে ছবিটিতে। ব্যক্তিজীবনে আলাদা তারা। তাই পর্দায় তাদের একসঙ্গে দেখাটাও দর্শক মেনে নিতে পারছেন না। ফলাফল ব্যবসায় মন্দার কবলে পড়েছে ‘পাঙ্কু জমাই’। অন্যদিকে মাত্র তিনটি হলে মুক্তি পেলেও প্রশংসা পেয়েছে ‘কমলা রকেট’ ছবিটি।
ভিন্ন ধরনের গল্পের কারণে যারাই ছবিটি দেখেছেন, সবাই প্রশংসা করেছেন। এতে অভিনয় করেছেন টিভি পর্দার জনপ্রিয় দুই আভিনেতা মোশাররফ করিম ও তৌকীর আহমেদ।
নির্মাণ নিয়েও প্রশংসিত হয়েছে ছবিটি। হয়নি কেবল ব্যবসা। এ ছাড়া ঈদে মুক্তি দেয়াটাই ভুল সিদ্ধান্ত ছিল বলে অনেকে অভিমত দিয়েছেন। অন্য সময় মুক্তি দিলে ছবিটি আলোচিত হতো বলেই ধারণা সবার।
ছবিটি নিয়ে প্রচার-প্রচারণাও চালানো হয়নি। ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজনা করেছে ছবিটি। এবারের উৎসবে যে বিষয়েই আলোচনা জমুক না কেন উৎসব শেষে বাণিজ্যিক বিচারে শীর্ষে রয়েছেন শাকিব খান।